জমকালো আয়োজনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের (বিএসজেএ) ‘বিএসজেএ অ্যাওয়ার্ড নাইট ২০২৩’। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ছয়টায় শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠান ক্রীড়াবিদ, ক্রিকেটার, ফুটবলার, সংগঠক, পৃষ্টপোষক ও সাংবাদিকদের মিলন মোলায় রূপ নিয়েছিল।
এবারের আয়োজনে গত ১০ বছরে দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদানের জন্য খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি, সংগঠক, পৃষ্ঠোপোষক ও এসোসিয়েশনের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে সর্বমোট ৪৬ টি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে বিএসজেএ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলা ক্রীড়াবিদ, স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও দেশের শীর্ষ সারির গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত থেকে প্রান্তবন্ত এই অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান। নিজের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, “বিএসজেএ এওয়ার্ড নাইটে আগত পুরস্কারের জন্য মনোনীত খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি, সংগঠক, পৃষ্ঠপোষক, মন্ত্রণালয় ও এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের বর্তমান ও সাবেক খেলোয়াড়, বিএসজেএর সদস্যবৃন্দ এবং বিভিন্ন মিডিয়া হাউজের সহকর্মীবৃন্দ, অনুষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধান অতিথিকে ধন্যবাদ। ক্রীড়াঙ্গনের সবার উপস্থিতিতে এমন একটি আয়োজন করতে পেরে আমরা গর্ববোধ করি। বিএসজেএ পুরস্কার খেলোয়াড়, সংগঠক, পৃষ্ঠপোষক, কোচ, ম্যাচ অফিসিয়ালদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে আরও ভালো করতে অনুপ্রাণিত করবে।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, “আজকের অত্যন্ত সুন্দর এই আয়োজনে ক্রীড়াঙ্গনে আলোকিত মানুষদের মিলনমেলা বসেছে। যারা ক্রীড়াঙ্গনকে আলোকিত করে এরই মধ্যে আমাদেরকে সম্মানে আসিন করেছেন। বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের এটি অত্যন্ত ব্যতিক্রমধর্মী একটি আয়োজন। আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। আজকের পুরস্কারজয়ীদের অভিনন্দন ও শুভকামনা।”
এছাড়া বক্তব্য রেখেছেন বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ টি এম সাইদুজ্জামান বলেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “বিএসজেএ হলো সেই জামান ভাই, মঞ্জু ভাইদের হাত ধরে করা। আমরা সেই গাছে শুধু যেটুকু পারি জল দিয়ে যাই। বিএসজেএ হলো আমাদের অহংকার, ইতিবাচক অর্থে অহংকার। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই অনেক ধৈর্য্য নিয়ে এই অনুষ্ঠান উপভোগ করার জন্য।
অনুষ্ঠানে ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পারফর্মেন্সের বিচারে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। যেখানে ২০১৩ সালে বিএসজেএ স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচন হন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। প্রথম রানারআপ হয়েছেন ক্রিকেটার সোহাগ গাজী। দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছেন হকি খেলোয়াড় রাসেল মাহমুদ জিমি। এই বছর প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ডের জন্য নির্বাচিত হয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২০১৪ সালে বিএসজেএ স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচন হন শ্যুটার আব্দুল্লাহেল বাকি। প্রথম রানারআপ হয়েছেন ফুটবালর মামুনুল ইসলাম। দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছেন মুশফিকুর রহিম। এই বছর প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড জিতেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
২০১৫ সালে বিএসজেএ স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হয়েছেন ক্রিকেটার মোস্তাফিজুর রহমান। প্রথম রানারআপ হয়েছেন ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছেন ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। বর্ষসেরা কোচের পুরষ্কার জিতেছেন ফুটবল কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানী। এ বছর প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
২০১৬ সালে বিএসজেএ স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা। প্রথম রানারআপ হন ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। শ্যুটার শাকিল আহমেদ হন দ্বিতীয় রানারআপ। বর্ষসেরা কোচ হিসেবে পুরস্কার জেতেন ফুটবল কোচ গোলাম রব্বানি।
২০১৭ সালে বিএসজেএ স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হয়েছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম হন প্রথম রানারআপ। দ্বিতীয় রানারআপ হন ফুটবলার জাফর ইকবাল। বর্ষসেরা সংগঠক হিসেবে পুরস্কার জেতেন ফুটবল সংগঠক মাহফুজা আক্তার কিরন।
২০১৮ সালে বিএসজেএ স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। প্রথম রানারআপ হন শ্যুটার আব্দুল্লাহেল বাকি। দ্বিতীয় রানারআপ হন শ্যুটার শাকিল আহমেদ। বর্ষসেরা এসোসিয়েশন হিসেবে পুরস্কার জেতে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন। এছাড়া পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পুরস্কার জেতে সিটি গ্রুপ। প্রেসিডেন্ট`স অ্যাওয়ার্ড জেতে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল।
২০১৯ সালে বিএসজেএ স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন আর্চার রোমান সানা। ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার হন প্রথম রানারআপ। দ্বিতীয় রানারআপ হন ফেন্সার ফাতেমা মুজিব। বর্ষসেরা পৃষ্টপোষক হিসেবে পুরস্কার জেতে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। প্রেসিডেন্ট`স অ্যাওয়ার্ড জেতেন ফুটবল রেফারি জয়া চাকমা।
করোনাকালীন সময়ে কিছু মানুষের সাহসী ভূমিকা বেশ আলোচিত হয়েছিলো। এমন ৩ ব্যাক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে বিএসজেএ। তারা হচ্ছেন তামিম ইকবাল, আরিফা জাহান বিথী, সংগঠক আব্দুল গাফফার, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। এছাড়া বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে প্রথম শিরোপা জেতা বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলকে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
২০২১ সালে বিএসজেএ স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন আর্চার দিয়া সিদ্দিকী। প্রথম রানারআপ হন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় রানারআপ হন ফুটবলার তপু বর্মণ। বর্ষসেরা কোচ হিসেবে পুরস্কার জেতেন আর্চারি কোচ মার্টিন ফ্রেডেরিক।
২০২২ সালে বিএসজেএ স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন ক্রিকেটার লিটন দাস। ফুটবলার সাবিনা খাতুন প্রথম রানারআপ হন। দ্বিতীয় রানারআপ হন ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রেসিডেন্ট`স অ্যাওয়ার্ড জেতে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল, যারা দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত সাফের শিরোপা জিতেছিল।
২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড জেতা মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, “বিএসজেএকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে পুরস্কৃত করার জন্য। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের যারা এখানে আছেন প্রবীন, নবীন, তরুণ উদীয়মান যারা আছেন সবাইকে ধন্যবাদ। আমি আশা করছি তরুণদের হাত ধরে ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাবে। শুধু ক্রিকেট নয়, সব খেলার জন্য আমার শুভকামনা।”
এছাড়া ২০১৭ সালে বিএসজেএ স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার সাকিব আল হাসান বলেন, “ধন্যবাদ সবাইকে। দোয়া করবেন আমরা সবাই যেন আরও বেশি বেশি পুরস্কার পাই।”
অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সকলের জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থাও করেছিল বিএসজিএ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথি, সাংবাদিক ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দারুণ এই আয়োজনের জন্য বিএসজিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।