এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে মাঠে নেমে ছিল বাংলাদেশ। এই ম্যাচে আফগানদের ৮৯ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের আশা বাঁচিয়ে রাখল সাকিব আল হাসানের দল। এই টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না টাইগারদের সামনে।
এদিন পাকিস্তানের লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে মেহেদী মিরাজ ও নাজমুল হোসাইন শান্তুর দুই জনের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত টাইগাররা ৫ উইকেটে ৩৩৪ রান জড়ো করে। জবাবে তাসকিন আহম্মেদ ও শরিফুল ইসলামদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আফগানিস্তান ৪৪ ওভার ৩ বলে ২৪৫ রান তুলেই গুটিয়ে যায়। এতে বাংলাদেশ ৮৯ রানের জয় নিয়ে এশিয়া কাপের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখলে। এই ম্যাচে দুই ইনিংসে মোট ৫৭৯ রান হয়েছে। যেটা বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যে ওয়ানডে ম্যাচে সর্বোচ্চ রান।
এদিন টস জিতে একাদশে তিন পরিবর্তন নিয়ে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। নাঈম শেখ ওপেনিংয়ে নামেন মেহেদি হাসান মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে। এদিন শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ছিলেন নাঈম। অন্যদিকে শুরুতে খোলসবন্দি থাকলেও পরে হাত খোলা শুরু করেন মিরাজ। কিন্তু দলীয় ৬০ রানে নাঈমের বিদায়ে এই জুটি ভাঙে। পাওয়ার-প্লের শেষ ওভারে মুজিবের বলে নাঈম বোল্ড হয়ে ফিরেছেন। তার ব্যাট থেকে আসে ৩২ বলে ৫ চারে ২৮ রান।
ওয়ান-ডাউনে নামা তাওহীদ হৃদয় রানের খাতা খোলার আগেই গুলবাদিন নাঈবের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। এরপরেই নাজমুল হাসান শান্তকে সঙ্গে নিয়ে মিরাজ ১৯৪ রানের রেকর্ড গড়া জুটি করেন। তৃতীয় উইকেটে আফগানদের বিপক্ষে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি। রেকর্ড গড়া জুটির পথে মিরাজ-শান্ত দুজনেই পেয়েছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
তাদের জুটি ভাঙে মিরাজ ১১৯ বলে ১১২ রান করে রিটায়ার্ড হার্ট গেলে। বন্ধুর বিদায়ের পর শান্তও ফেরেন দ্রুত। তিনি ৯ চার ও ২ ছয়ে খেলেন ১০৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। শান্ত-মিরাজের বিদায়ের পর ম্যাচের হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দুজনেই দলের রান বাড়িয়ে নিতে খেলেন গুরুত্বপূর্ণ দুই ক্যামিও ইনিংস। মুশফিক ১৫ বলে ২৫ রান করে রান আউট হন। তবে সাকিব ১৮ বলে অপরাজিত ৩২* রান করেন। এরপর শামীম পাটোয়ারী ৬ বলে ১১ রান এবং আফিফ হোসাইনের ৩ বলে অপরাজিত ৪* রানের কল্যাণে আফগানদের ৩৩৫ রানে টার্গেট দেন বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের হয়ে একটি করে উইকেট নেন গুলবাদিন নাঈব ও মুজিবর রহমান।
পাহাড় সমুহ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ১ রান করে আউট হন। এরপর দ্বিতীয় উইকেট ইব্রাহিম জাদরান ও রাহমাত শাহ জুটি গড়েন। এই জুটিতে আফগানিস্তানের স্কোর বোর্ডে যোগ হয় ৭৮ রান। এই জুটি ভাঙে তাসকিনের বলে রাহমাতের বিদায়ে। এরপর হাশমতুল্লাহ শাহিদী ও ইব্রাহিম জাদরান তৃতীয় উইকেট জুটি গড়েন। তাদের জুটি থেকে আসে ৫২ রান। এরপর আফগান ব্যাটাররা বাংলাদেশের বোলারদের উপর শেষবার প্রতিরোধ গড়েন হাশমতুল্লাহ ও নাজিবুল্লাহ জাদরান। চতুর্থ উইকেট জুটিতে তারা করেন ৫২ বলে ৫৮ রান। এই জুটি ভাঙে নাজিবুল্লাহর বিদায়ের পর। এই ব্যাটারের আউটের পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে আফগানিস্তান। শেষ পর্যন্ত রাশিদরা থামে ২৪৫ রানে। বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন ৪টি এবং শরিফুল ৩টি উইকেট শিকার করেন।
মিরাজ ব্যাট হাতে অপরাজিত ১১২* রান এবং বল হাতে ১ উইকেট শিকার করায় ম্যাচে সেরার পুরস্কার এই অলরাউন্ডারের হাতে উঠেছে। এই ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেলেও এশিয়া কাপে তাদের সুপার ফোর নিশ্চিত হয়নি এখনি। সাকিবদের সুপার ফোরে যাওয়ার জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে শ্রীলঙ্কা- আফগানিস্তান ম্যাচের দিকে।