• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে সোচ্চার হতে হবে


আরিফ জেবতিক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪, ০২:৫৫ পিএম
যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে সোচ্চার হতে হবে

পরিমলের পরে, ভিকারুননিসা নূন স্কুলের আরেক শিক্ষক মুরাদ হোসেনকে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়। এ মাসেই গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন বিভাগের একজন ছাত্রী।

ঠিক একমাস আগে নোয়াখালীর চাটখিলে চার ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে মাদ্রাসাশিক্ষক সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  বলাৎকারের শিকার শিশুদের বয়স ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। আগের মাসে মানিকগঞ্জে ৯ বছর বয়সী শিশুকে যৌন নির্যাতন করে গ্রেপ্তার হন জাহাঙ্গীর নামের আরেক মাদ্রাসাশিক্ষক।

এই যে পরিস্থিতি, এটি ভয়াবহ। একেবারে শিশু থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী, কেউই যৌন নির্যাতন থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। খুব এক্সট্রিম পর্যায়ে না গেলে এসব খবর আমরা পাই না। যৌন বিষয়ে আমাদের যে সামাজিক ট্যাবু, এ কারণে প্রতি দশ হাজার নির্যাতনের একটিও আমরা খবর পাই কি না, আমার সন্দেহ হয়।

তাই শুধু আইন আদালত দিয়ে এই অনাচার রোধ করা যাবে না। এটাকে নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবার সময় ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে। তবু সকলের সক্রিয় হওয়া উচিত।

প্রথমেই শিশু পর্যায়ে ‘গুড টাচ, ব্যাড টাচ’ বিষয়টি শেখানো প্রতিটি স্কুলে বাধ্যতামূলক করা হোক। এটি স্কুল-মাদ্রাসা সবখানেই পাঠ্য করা দরকার। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ইউনিভার্সাল আচরণবিধি তৈরি করে সেটি অধ্যয়ন করা সব শিক্ষকের জন্য বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। জেলা উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে ওয়ার্কশপ করা যেতে পারে, যেখানে প্রত্যেক শিক্ষককে অংশ নিয়ে সার্টিফিকেট নিতে হবে। আচরণবিধিটি ইন্টারনেটে সহজলভ্য করতে হবে যাতে শুধু শিক্ষকরা নয়, শিক্ষার্থী এবং অভিভাকরাও পরিষ্কার করে বুঝতে পারেন যে শিক্ষকদের কোন আচরণ গ্রহনযোগ্য, আর কোনটি নয়। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল শিক্ষকদের এইরকম আচরণবিধি ও কর্মশালার আওতায় আনতে হবে।

যৌন নিপীড়নের যারা শিকার হন, তাদের বড় অংশই বাকি জীবনে এই ভয়াবহ ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না। আমাদের দেশে এসব মানুষদের কথা বলার, চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ প্রায় নাই বললেই চলে। এই নিপীড়ন একেকটা মানুষের জীবনকে তছনছ করে দেয়।

আমাদের সকলেরই উচিত এই নিপীড়ন প্রতিরোধে সোচ্চার হওয়া। একেকটি ঘটনা আলাদা আলাদাভাবে ডিল করলে চলবে না। কারণ এতে করে আইসবার্গের শুধু চূড়াটিই ধরা পড়বে, সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না।

এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে একটি সমন্বিত উদ্যোগ এই মুহূর্তেই দরকার।

Link copied!