• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সেই শহর ওর দিকে কখনো তাকাবে না...


জান্নাতুন নাঈম প্রীতি
প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২২, ০৪:২৪ পিএম
সেই শহর ওর দিকে কখনো তাকাবে না...

অথচ নোরা ফাতেহী আসার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত ছিল— গত কয়েক বছর দেশে একটা নিশ্চুপ দুর্ভিক্ষ চলছে। মানুষ মাছ মাংস বাজারের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে অনেক আগেই। চাল, তেল, ডিমের দাম বেড়ে গেছে। অনেকে সেই ডিমও তালিকা থেকে কমিয়েছে। কিন্তু এই জাতির বেশিরভাগ লোকের ফেসবুক প্রোফাইল দেখলে মনে হবে— এদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো, নোরা ফাতেহির আগমন!

কাতার বিশ্বকাপের বিভিন্ন স্টেডিয়াম বানাতে গিয়ে মারা পড়েছে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক। এই শ্রমিকরা আর কেউ না— আমাদেরই দেশের গরীব মানুষ, যাদের জীবন আর শ্রম দুইই সস্তা। সেই ইভেন্টের ব্র‍্যান্ড এম্বাসেডর হলেন নোরা। তিনি সেখানে গান গেয়েছেন ও নেচেছেন। ইতিমধ্যেই সেই ইভেন্টে মেয়েদের কাপড়ের ওপর দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। বলা হয়েছে কোন কাপড় পরতে পারবে আর কোন কাপড় পরতে পারবে না তারা!

নোরা ফাতেহির যদি বিন্দুমাত্র জ্ঞান থাকতো নারীকে মানুষ না ভাবার অপমানের, তাহলে কি তিনি পারফর্ম করতেন? এরকম ব্যক্তিত্বহীন ব্যক্তি কি মানুষের কাতারেই পড়েন? একটা দেশের লোক কি পরিমাণ কাণ্ডজ্ঞানহীন হলে নির্বিচারে নিজেদের শ্রমিকদের হারিয়ে ফেলা এরকম একটা ইভেন্টের চূড়ান্ত নির্লজ্জ ব্র‍্যান্ড এম্বাসেডরকে দেখার নির্লজ্জতা করতে পারে এমন প্রকাশ্যে? 

আমার প্রিয় নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, দুর্ভিক্ষ কখনো খাবারের অভাবে হয় না, দুর্ভিক্ষ হয় সুষম বণ্টনের অভাবে। আমাদের একপাশে নোরা ফাতেহি, একপাশে শ্রমিকদের প্রাণ আর মাঝখানে চকচকে মঞ্চের ওপর নির্লজ্জতার প্রদর্শনী— এই হচ্ছে একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের অর্জন! 
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বলতেন, “এখন তো চারিদিকে রুচির দুর্ভিক্ষ! একটা স্বাধীন দেশে সুচিন্তা আর রুচির দুর্ভিক্ষ! এই দুর্ভিক্ষের কোনো ছবি হয় না।”

এই চকচকে প্রদর্শনীগুলোর ফাঁকে না-খেতে পাওয়া মুখগুলোর কখনো দেখা হবে না। কখনো সেই শিশুটির বড়ো বড়ো টলমলে চোখে খাবার কেনায় বাবার ব্যর্থতায় আত্মহত্যা করা মুখের দিকে তাকানো হবে না। কারণ, সেই শহর ওর দিকে কখনো তাকাবে না, যেখানে নোরা ফাতেহিকে দেখার জন্য দশ-পনেরো হাজার টাকা খরচ করে একদল আর পাশের ডাস্টবিনের ময়লা থেকে খাবার খোঁজে আরেকদল!

কারণ ঈশ্বর থাকেন ভদ্রপল্লীতে, ডাস্টবিনের উচ্ছিষ্টের পাশে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না...

Link copied!