ইসলামী ব্যাংকে যে অস্বাভাবিক কিছু একটা ঘটছে সেটা ব্যাংকটির ঋণ প্রদানে অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি থেকেই বোঝা যায়। যে ব্যাংক প্রতিবছর ৪ থেকে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে আসছে, সেই ব্যাংক হঠাৎ করে ২০২১-২২ সালে ২৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা কোনোভাবেই স্বাভাবিক ঘটনা না।
এরকমই অস্বাভাবিক ঋণ প্রদানের তিনটি কেস স্ট্যাডি উঠে এসেছে ‘দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের’ এক রিপোর্টে। মেডিগ্রীন, মার্টস বিজনেস এবং এসএস স্ট্রেইট লাইন ইন্টারন্যাশনাল নামের তিনটি কোম্পানিকে সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক থেকে কোনো ধরণের জামানত ছাড়াই ৯০০ কোটি টাকা করে ঋণ দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে মেডিগ্রীন ও মার্টস বিজনেসের রেজিস্ট্রেশন করা হয় ১১ সেপ্টেম্বর এবং ঋণ অনুমোদন হয় ২৪ অক্টোবর আর এসএস স্ট্রেইট লাইন ইন্টারন্যাশনালের রেজিস্ট্রেশন করা হয় ৩ আগস্ট এবং ঋণ অনুমোদন করা হয় ১৮ সেপ্টেম্বর।
এভাবে ইসলামী ব্যাংক থেকে সদ্য রেজিস্ট্রেশন করা তিনটি কোম্পানির নামে অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে কোনো ধরণের জামানত ছাড়াই মোট ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে এবং প্রত্যেকেই ভুয়া অফিস ঠিকানা ব্যবহার করেছে, যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে এগুলি শেল কোম্পানি এবং এই ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগীরা বেনামী এবং অন্যকেউ। (সূত্র: How a 24-year-old greenhorn is `blessed` with a Tk900cr loan, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ২৭ নভেম্বর ২০২২) আসলে ব্যাংকের মালিকানা দখলের মাধ্যমে কিভাবে ঋণের নামে জনগণের আমানতের অর্থ লুণ্ঠন করা হয়, তার একটি বড় দৃষ্টান্ত হতে পারে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এস আলম গ্রুপের হাতে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা আসার মাত্র ১৫ মাসের মাথায়ই তীব্র আর্থিক সংকটে পড়ে যায় ব্যাংকটি। সে সময় সংবাদপত্রে এই বিষয়ে খবরও প্রকাশিত হয়েছিল। মালিকানা পরিবর্তনের আগমুহূর্তেও ব্যাংকটিতে ১০ হাজার কোটি টাকার মত বিনিয়োগযোগ্য তহবিল ছিল। কিন্তু পরিবর্তনের পর তারা যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করে, ঋণ দেয় তার চেয়ে অনেক বেশি।
২০১৭ সালের শুরুতে ব্যাংকটির আমানত ছিল ৬৭ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা এবং ঋণ ৬১ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। ওই সময় ব্যাংকটির ইসলামিক বন্ডে বিনিয়োগ ছিল ৫ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের শুরুতে আমানত বেড়ে হয় ৭৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা এবং ঋণ বেড়ে হয় ৭০ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। এরপর ২০১৮ সালের শুরু থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত আমানত বেড়ে হয় ৭৬ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা এবং ঋণ বেড়ে হয় ৭৪ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। আর এই সময়ে ইসলামিক বন্ডে থাকা বিনিয়োগও শূন্য করে ফেলে ব্যাংকটি। ইসলামিক বন্ডে থাকা ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি তুলে এনে সংকট মেটায় ব্যাংকটি। (সূত্র: মালিকানা বদলের পর ১৫ মাসেই ইসলামী ব্যাংক সংকটে, ২৫ এপ্রিল ২০১৮, প্রথম আলো)
তবে সাম্প্রতিক ঋণ বৃদ্ধির বিষয়টি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভিন্ন কারণ। ‘দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের’ এই রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে গত ৫ বছরে ব্যাংকটি সর্বমোট যত পরিমাণ ঋণ প্রদান করেছে, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর এই ৯ মাসেই তার ৫৩ শতাংশ ঋণ প্রদান করেছে। অন্য বেসরকারি ব্যাংকের ঋণের প্রবৃদ্ধি যেখানে ৯ শতাংশ, ইসলামী ব্যাংকের ঋণের প্রবৃদ্ধি সেখানে ২১.৩৬ শতাংশ যা পরিস্থিতির অস্বাভাবিকতার দিকটিই স্পষ্ট করে।









-20251226075252.jpeg)







-20251225102258.jpg)

















