• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সাহিত্যচর্চার মাধ্যম হবে উন্মুক্ত লাইব্রেরি


আবদুল্লাহ আল মামুন
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২, ১১:৫৯ এএম
সাহিত্যচর্চার মাধ্যম হবে উন্মুক্ত লাইব্রেরি

রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহবাগ, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী ও নিউমার্কেট এলাকা সব সময় সাধারণ মানুষ এবং শিক্ষার্থীদের ভিড়ে জমজমাট থাকে। বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দীর একটি গেট ঘিরেই সরগরম থাকত সব সময়। এখন আর তেমন কোলাহল দেখা যায় না। এখানে ছিল খাবারের দোকান আর চায়ের স্টল। এসব দৃশ্য বর্তমানে নেই। এমনকি নেই চিরচেনা খাবারের দোকান ও চায়ের স্টল। গেটেই ময়লা-আবর্জনা ও জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকত। 

সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেলো ভিন্ন এক চিত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ময়লা-আবর্জনা ও জরাজীর্ণ জায়গা পরিষ্কার করা হয়েছে। আর সেখানে একটি উন্মুক্ত লাইব্রেরি স্থাপন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। 

উন্মুক্ত লাইব্রেরির চিন্তা কীভাবে এলো এ বিষয়ে তানভীর হাসান সৈকত সংবাদ প্রকাশকে বলেন,‘‘আমার কাছে এই উন্মুক্ত লাইব্রেরিটি একটি স্বপ্নের মতো। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল উন্মুক্ত লাইব্রেরি গড়ে তোলা। ছোটবেলা থেকেই মনে হতো উন্মুক্ত লাইব্রেরির চর্চা বাংলাদেশে সবচেয়ে জরুরি। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম।” 

সৈকত বলেন, “এছাড়া আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করি, সেই বঙ্গবন্ধু কিন্তু অনেক লাইব্রেরি তৈরি করে গেছেন। আর এই সোহরাওয়ার্দীতে শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণও দিয়েছিলেন। এরপরই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাহলে বলা যায়, এটি ঐতিহাসিক একটি জায়গা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিল্প-সংস্কৃতির যেমন চর্চা হয় তেমনি সাহিত্যচর্চারও একটি জায়গা থাকা দরকার। শুধু ইট-পাথরের দেয়ালের মধ্যে বই পড়ব, তা নয়; উন্নত বিশ্বে দেখা যায়, রাস্তার পাশে কিংবা পার্কের পাশে বই পড়ার সুযোগ থাকে। সেই সুযোগটা চিন্তা করেই উন্মুক্ত লাইব্রেরি করা। শিশু থেকে যেকোনো বয়সের লোক এসে এখানে বই পড়তে পারবে।’’

তিনি আরও বলেন, “আমার কাছে এটা ছোট উদ্যোগ। বড় একটা কাজের শুরু মাত্র। মানুষের মুক্তচিন্তা চর্চার জন্য বড় একটি জায়গা লাইব্রেরি, তাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে বা আশপাশে যারা পড়াশোনা করে তাদের মুক্তচিন্তা চর্চার একটি বড় জায়গা হতে পারে উদ্যান গেটের এই উন্মুক্ত লাইব্রেরি।”

কী ধরনের বই পাওয়া যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে উন্মুক্ত লাইব্রেরির এই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, “তিন ধরনের বই সংগ্রহে রাখা হবে। প্রথমত, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ের বই, দ্বিতীয়ত, বিদেশি সাহিত্যের বই, তৃতীয়ত বিদেশি সাহিত্যের চর্চার পাশাপাশি দেশের সাহিত্যচর্চা যাতে ছেড়ে না দেয়, সে জন্য থাকবে দেশীয় সাহিত্যের বইও। দেশীয় সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ ও চর্চা বৃদ্ধির লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

সৈকত বলেন, “পার্কের মতো জায়গায় মানুষ এখানে বসে বসে বই পড়তে পারবেন। আমার ইচ্ছে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দু-একটি জায়গায় লাইব্রেরি স্থাপন করে একপর্যায়ে দেশের সবকটি জেলায় এই উন্মুক্ত লাইব্রেরি তৈরি করবো। বাংলাদেশের সব জায়গায় যাতে উন্মুক্ত লাইব্রেরির এই চর্চা থাকে সে লক্ষ্যে কাজ করার চেষ্টা করবো। আরেকটি বিষয় হলো, শুধু বই পড়া হবে তা নয়; এখানে ভবিষ্যতে পাঠচক্র হবে, উন্মুক্ত আলোচনা, মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও কবিতা প্রতিযোগিতার পরিকল্পনাও রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, এ লাইব্রেরিতে যে কেউ এসে বই পড়তে পারবেন। পাঠকরা যাতে সুন্দরভাবে পড়তে পারেন, তার জন্য নির্দিষ্ট একটি জায়গায় টেবিল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই জায়গায় বসেই তারা বই পড়তে পারবেন এবং পড়া শেষ করে বইগুলো আবার সেখানেই রেখে যেতে হবে। পড়ার জায়গার পাশে তারা একটি ‘বুক ডোনেট বক্স’ স্থাপন করেছি, সেখানে কেউ চাইলে নিজেদের পড়া বই দিতে (ডোনেট) পারবেন। আবার কারো প্রয়োজন হলে সেখান থেকে বই সংগ্রহও করতে পারবেন।”

উন্মুক্ত লাইব্রেরির সঙ্গে পার্কের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বিভিন্ন স্থির চিত্র টানিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া কেউ বই পড়ার পাশাপাশি যেন ছবিও তুলতে পারেন সে জন্য একটি গ্রাফিতির পটভূমিও (ব্যাকগ্রাউন্ডও) রয়েছে।


 

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!