তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের পদত্যাগপত্রটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) রাত সাতটায় তার পদত্যাগপত্র গণভবনে পাঠানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা।
এর আগে দুপুরে দপ্তরে পদত্যাগপত্রটি পাঠান মুরাদ হাসান। এরপর বিকেল ৩টায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দপ্তরে জমা দেন প্রতিমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।
প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো এই পদত্যাগপত্রে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ বলেন, “২০১৯ সালে আমাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আমি অদ্য ৭ ডিসেম্বর থেকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক।”
“এমতাবস্থায় আপনার নিকট বিনীত নিবেদন এই যে, আমাকে অদ্য ৭ ডিসেম্বর তারিখ থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের লক্ষ্যে পদত্যাগপত্রটি গ্রহণে আপনার একান্ত মর্জি কামনা করছি।’”
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের জেরে বেশ কয়েকদিন ধরেই সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। বিশেষ করে রাষ্ট্রধর্ম, রাজনীতি, খালেদা জিয়ার নাতনি ও সবশেষ ফোনালাপ ফাঁস নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তার উল্টাপাল্টা মন্তব্য এবং অস্বাভাবিক আচরণের কারণে দলীয় সহকর্মীদেরও বিব্রত হতে হয়েছে।
এসবের জেরে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর আজ দুপুরে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।
এরপর জামালপুর-৪ আসনের এই সাংসদকে দলীয় ভাবমূর্তি বিনষ্ট, অগঠনতান্ত্রিক ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকেও আজ অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বিকেল ৪টায় জেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাতেই এই কথা জানিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট চিঠি পাঠাবে জেলা আওয়ামী লীগ।
এদিকে মুরাদ হাসানকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে আগামী কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
এছাড়া সংশ্লিষ্টদের মতে, দল থেকে বহিষ্কার হলে তাকে সংসদ সদস্যপদও হারাতে হতে পারে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ডা. মো. মুরাদ হাসান।
এর আগে ২০০৮ সালেও তিনি একই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে সরকার গঠনের সময় মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ৫ মাসের মাথায় ওই বছরের ১৯ মে তার দফতর পরিবর্তন করে তথ্য প্রতিমন্ত্রী করা হয়। মুরাদ হাসান পেশায় চিকিৎসক। তিনি আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য।