করোনাকালে রোগীদের ফ্রি টেলিমেডিসিন সেবাদানকারী ৩৯ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে সম্মাননা প্রদান করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ট্রিটমেন্ট কমিউনিটি। শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) সংগঠনটির পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশে (আইইডিবি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
এদিন সন্ধ্যায় জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করে ট্রিটমেন্ট কমিউনিটি। পাশাপাশি এত দিন ফেসবুকের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা সংগঠনটি সাংগঠনিকভাবেও আত্মপ্রকাশ করে।
ট্রিটমেন্ট কমিউনিটির প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউনেটাল সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুল হানিফ টাবলু।
এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগের বিভাগীয প্রধান ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার ও বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম মাহমুদুল হক পল্লব।
সম্মাননা পাওয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, “ট্রিটমেন্ট কমিউনিটি এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে সাধারণ মানুষ যেকোনো সময় চিকিৎসাসংক্রান্ত পরামর্শ নিতে পারেন। বিশেষ করে করোনাকালে এই সংগঠনটি যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, তা সত্যি প্রশংসনীয়। এমন একটি কমিউনিটিতে যুক্ত হতে পেরে আমরাও আনন্দিত এবং ধন্য। কারণ এই সংগঠনটি আমাদের সাধারণ মানুষের দুর্দিনে পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা চাই ট্রিটমেন্ট কমিউনিটি তাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখুক এবং আরও অনেক দূর এগিয়ে যাক।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. আব্দুল হানিফ টাবলু বলেন, “আমরা আজকে কয়েকজন চিকিৎসসককে সম্মাননা দিলাম। এই সম্মাননাটা আসলে একটি আনুষ্ঠানিক ভালোবাসা, একটা টোকেন। কিন্তু আসল সম্মানটা হলো কার্যক্ষেত্রে যদি আমরা সবসময় সেটা দিতে পারি। ভালো কাজের সবসময় প্রচার হওয়া উচিত। কারণ, তাহলে অন্যরা সেটি দেখে উৎসাহিত হবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য এটি খুবই দরকার। আমাদের সমাজে রোল মডেল কমে গেছে। এজন্য ভালো কাজগুলোকে উৎসাহিত করা দরকার।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, “যারা নিজের পরিবারের বাইরে অন্যের জন্য একটি পা বাড়ায় আমি তাদের সেলুট করি। সেটা এবার যেভাবেই হোক।”
বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম মাহমুদুল হক পল্লব বলেন, “সাধারণ মানুষকে ফ্রি সেবা দেওয়া এবং সহযোগিতা করায় ট্রিটমেন্ট কমিউনিটির এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। পরিবারের বাইরে যদি একটি মানুষের জন্য একটি স্টেপ নেওয়া যায়, তাহলে সেটি মহান কাজের অংশ হিসেবে স্বীকৃত হবে। চিকিৎসকদের এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি ট্রিটমেন্ট কমিউনিটিকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিব। এমন মহৎ কাজে পাশে থাকতে পেরে আমি নিজেও গর্বিত বোধ করছি।”
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম মিলন বলেন, “প্রতিটা পেশায় তিন ধরনের মানুষ দেখা যায়। একধরনের মানুষ নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন না। এ ধরনের মানুষের বেতনটা হালাল হয় না। দ্বিতীয় একধরনের মানুষ আছে, যারা নিজেদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করে বেতন হালাল করেন। আরেক ধরনের মানুষ আছে, যারা নিজেদের দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কীভাবে মানুষজনকে সেবা দিতে পারে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। এই ধরনের মানুষকে আমরা বলি মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ। সেটা চিকিৎসক হতে পারে, অন্য যেকোনো পেশা হতে পারে। আমি নিজেকে খুব গর্বিত মনে করছি, আজকে আমাদের এই অনুষ্ঠানে যারা আছেন, তারা সবাই মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ। তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কীভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করা যায়, তারা এই চিন্তাই সব সময় করেন। এটা করেন বলেই ট্রিটমেন্ট কমিউটিতে তাদের সম্পৃক্ততা ছিল এবং করোনাকালে সাধারণ মানুষকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সহায়তা করে গেছেন। তাদের এই ঋণ আমরা কখনো শোধ করতে পারব না। তবে যেটা পারব তাদের কৃতজ্ঞতা জানানো। সেই কৃতজ্ঞতা জানানো জন্যই আজকের এই অনুষ্ঠান।”
অনুষ্ঠানের শুরুতে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে নিজেদের কার্যক্রম তুলে ধরে ট্রিটমেন্ট কমিউনিটি। দেশে/বিদেশে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ, অনলাইন টেলিমেডিসিন সেবাসহ রোগীদের সার্বিক সহযোগিতার উদ্দেশে ২০১৬ সালে ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ধীরে ধীরে এতে যুক্ত হন চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
গত পাঁচ বছরে গ্রুপের সদস্যরা প্রতিদিন ৬০-৭০ জন রোগীকে চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে আসছে। করোনাকালেও আক্রান্তদের এবং তাদের পরিবারকে সার্বক্ষণিকভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছে ট্রিটমেন্ট কমিউনিটি।