• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পঁচাত্তরে শিশুদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি : প্রধানমন্ত্রী


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২২, ০৫:৫৭ পিএম
পঁচাত্তরে শিশুদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি : প্রধানমন্ত্রী

“শিশুদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। পঁচাত্তরে শিশুদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি। ধানমন্ডি যেন কারবালা হয়েছিল” বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় ‘হৃদয়ে পিতৃভূমি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, আমাদের শিশুরা সুরক্ষিত থাকবে, সুন্দর জীবন পাবে। জাতির পিতা তো শিশুদের খুবই ভালোবাসতেন। আমার ছেলে জয়ের সৌভাগ্য হয়েছে আমার বাবার কোলে চড়ে খেলতে। বাবার কোলে চড়ে যখন শিশুরা খেলতেন, তখন তিনিও একজন শিশু হয়ে যেতেন। এটাই ছিল তাঁর বড় দিক।”

সরকারপ্রধান বলেন, “২১০০ সাল পর্যন্ত এই বাংলাদেশ কীভাবে উন্নত হবে, সে পরিকল্পনা আমি প্রণয়ন করে, সেটা দিয়ে গেছি। কাজেই শিশুদের ভবিষ্যৎ যাতে উজ্জ্বল হয়, সুন্দর হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের সব কর্মপরিকল্পনা।”

এ সময় শিশুদের উদ্দেশে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কবিতার কয়েকটি চরণ আবৃত্তি করে শোনান প্রধানমন্ত্রী।
‘যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’

শিশুরা সুরক্ষিত থাকবে, সুন্দর জীবন পাবে, এমন অঙ্গীকার জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “করোনাভাইরাসের সময় স্কুল বন্ধ ছিল। আল্লাহর রহমতে এখন সব স্কুল খুলে গেছে। কাজেই এখন স্কুলে পড়াশোনার সুযোগ আবার এসেছে। তারা পড়াশোনা করবে। সেটাই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।”

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “যখন দেশে করোনা ছিল, তখন আমরা অনলাইনে ক্লাস নিয়েছি। শিশুরা যেন কোনোভাবে বঞ্চিত না হয়, সেদিকে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করে দিচ্ছি। এখানে শিশুরা খেলাধুলা করতে পারবে, প্রতিযোগিতা করতে পারবে।”

এ সময় জাতির পিতা না থাকলে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব ছিল না জানিয়ে আজও শেখ হাসিনা প্রশ্ন তুলেছেন, কোন অপরাধে এই হত্যাকাণ্ড? এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য যে ’৭৫-এ কিন্তু শিশুরাও মুক্তি পায়নি। কারবালার দিনেও নারী-শিশুদের হত্যা করা হয়নি। কিন্তু এই বাংলার মাটিতে যাদের জন্য আমার বাবা জীবনটা উৎসর্গ করেছেন সেই বাঙালিদের হাতে তাকে জীবন দিতে হয়েছে।”

জাতির পিতার জন্যই আত্মমর্যাদা, আত্মপরিচয় ও একটি রাষ্ট্র পেয়েছি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমরা এই দেশে ফিরে এসেছিলাম আমার বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, এ দেশের শিশুদের যেন আমাদের মতো স্বজনহারা বেদনা নিয়ে বাঁচতে না হয়, তারা যেন সুন্দর জীবন পায়, উন্নত জীবন পায়।”

জাতির পিতা শিশুদের অনেক ভালোবাসতেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “তিনি (বঙ্গবন্ধু) ভালোবাসতেন বলেই আমরা যখন সরকার গঠন করি তখনই এই ১৭ মার্চকে জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করি।”

সরকারপ্রধান আরও বলেন, “দেশে শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন সেখানে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। তাছাড়া শিশু অধিকার আইন সেটাও তিনি করে দিয়ে যান। সেই সাথে শিশুরা যেন সুরক্ষিত থাকে তার জন্য তিনি বর্তমানের সরকারি শিশু পরিবার গঠন করেন।”

জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এবং নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে টুঙ্গিপাড়া: হৃদয়ে পিতৃভূমির এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী।

এছাড়া এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের বিশিষ্টজনরা। এ সময় অনুষ্ঠানমঞ্চেই ১৮ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত আলোচনা অনুষ্ঠান এবং মুজিব লোকমেলার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “এই টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে মুজিববর্ষ লোকজ মেলা করব। আমি আনন্দের সঙ্গে আপনাদের জানাচ্ছি যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শুভ জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে জাতির পিতার সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি ২১ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ মাঠে মুজিববর্ষ লোকজ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের গ্রামবাংলা নানা বৈচিত্র্যে ভরা। এই বৈচিত্র্যময় বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি তুলে ধরতে এই মেলা। ঐতিহ্যবাহী লোকজ পণ্যের প্রদর্শনীসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে নানা ধরনের আয়োজন থাকবে মেলায়।”

এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশবিষয়ক বই, চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন থাকবে মেলায়। এছাড়া সশরীরে মেলায় উপস্থিত থাকা সম্ভব হবে না বলে বৃহস্পতিবার মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুকন্যা আরও বলেন, “আমি সরাসরি উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করতে পারছি না, কিন্তু আমি আজকেই এই মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করছি।”

Link copied!