অন্যের দুর্নীতি চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার আগে নিজেদের অনিয়ম ও অসততা দূর করতে হবে, তাই অভিযান নিজের ঘর থেকেই শুরু করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২১’ উপলক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার অডিটরিয়ামে আলোচনা সভার আয়োজন করে।
এ সময় বঙ্গভবন থেকে পূর্বে ধারণ করা রাষ্ট্রপতির ভাষণটি সে অনুষ্ঠানে সম্প্রচার করা হয়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এছাড়া সৎ, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবানদের সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। তা হলেই সমাজে এই দুর্নীতি হ্রাস পাবে।
একই সঙ্গে দুদকের সব পর্যায়ের কর্মীদের সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা প্রদর্শনের আহ্বান জানান তিনি।
আব্দুল হামিদ বলেন, “বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যের যোগসূত্র হচ্ছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের উচ্চকৃত কণ্ঠ বিশ্বব্যাপী উচ্চারিত হচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘আপনার অধিকার, আপনার দায়িত্ব: দুর্নীতিকে না বলুন’ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও অর্থবহ হয়েছে বলে আমি মনে করি। জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত দুর্নীতিবিরোধী সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমনে অঙ্গীকারবদ্ধ। দুর্নীতি দমন, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ তথা সমাজে সততা এবং নিষ্ঠাবোধ বিকাশের লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।”
কমিশনের সব কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমি কমিশনের সব পর্যায়ের কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দুর্নীতি দমন কার্যক্রমে তারা যেন সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা প্রদর্শন করেন। যারা রাষ্ট্র কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহার করবে তাদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে প্রচলিত আইনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হবে এবং দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না। জনমনে এমন ধারণা জন্মাতে পারলেই দুদকের ওপর জনগণের আস্থা বাড়বে।”
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, “বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে দুর্নীতিবাজদের কৌশলও বদলেছে। তাই তাদের আইনের আওতায় আনতে হলে দুদককেও আরও কৌশলী হতে হবে। পাশাপাশি প্রশিক্ষিত জনবল ও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, “একজন দুর্নীতিবাজের পরিচয় শুধুই একজন দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক, দুর্নীতি করলে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। আগামী দিনগুলোতে দুদককে দুর্নীতি দমনে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিছুসংখ্যক লোকের জন্য যাতে পুরো দুর্নীতি দমন কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখবেন।
এছাড়া প্রবাদে আছে, ‘এই দুনিয়ায় হায়, সেই বেশি চায়, আছে যার ভূরি ভূরি। রাজার হস্ত করে কাঙ্গালের ধন চুরি’। মানুষের চাওয়া পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ক্রমশ বাড়তে থাকে। চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে সামর্থ্যের সামঞ্জস্য না থাকলেই দুর্নীতির বিস্তার ঘটে। তাই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি রেখে জীবন ধারণে অভ্যস্ত হলেই সমাজ থেকে দুর্নীতি হ্রাস পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি।
এছাড়া অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ, দুদক কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খান (অনুসন্ধান) ও মো. জহুরুল হক (তদন্ত) এবং দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
