• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আলু-পেঁয়াজ-আদা-রসুনের বাজারে হঠাৎই অস্থিরতা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মে ৭, ২০২৩, ০৭:৩২ পিএম
আলু-পেঁয়াজ-আদা-রসুনের বাজারে হঠাৎই অস্থিরতা

ঈদুল আজহার বাকি আছে আরও বেশ কিছু দিন। কিন্তু এরই মধ্যে ঝাঁঝ ছড়াচ্ছে পেঁয়াজ, আদা, রসুনের বাজার। সাথে বেড়েছে আলুর দাম। ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে হিমশিম খাচ্ছে ক্রেতারা।

বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেন সালেহা বেগম। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এসেছিলেন বাজার করতে। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “পেয়াজের দাম শুনে কইলজা কাইপ্পা গেছে। ৬০ টাকা কেজি পেয়াজ খাওনের টেহা আছে আমাদের? বেতন নাই, ভাতা নাই, কিন্তু সবকিছুর দাম বাড়ে।”

এদিকে মাস খানেক আগেও যে পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা সেই একই পেঁয়াজ কারওয়ান বাজারেই বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। বেড়েছে দ্বিগুণ। একই সাথে কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে আদা ও রসুনের দাম। বর্তমানে বাজারে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আস্ত রসুন। আর ভাঙা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজিতে। দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে। আর আমদানিকৃত আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।

দামের কারণের পণ্য ক্রয়ের স্বল্পতা তুলে ধরে আরেক ক্রেতা বলেন, “আগে যেখানে আদা, রসুন নিতাম ৫ কেজি করে এখন নিতে হচ্ছে ৩ কেজি।”

প্রয়োজনের পরিমাণের চেয়ে কম নেওয়ায় কোনো ধরনের প্রভাব পরিবারে পরবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আয় তো বাড়ে নাই। কিন্তু সবকিছুর দাম বেশি। এখন যা আয় সেই অনুযায়ীয় তো কিনতে হবে। কষ্ট হয়, কিন্তু কিছু তো করার নাই।”

অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি, সরবরাহ সংকট, ফলন কম হওয়ায় বেড়েছে এসব পণ্যের দাম। মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজা্রের এক ব্যবসায়ী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “কিছু কিছু এলাকায় ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ফলন কম। এছাড়া আমদানির জটিলতার কারণেও এই পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে।”
এদিকে একইভাবে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা বেড়েছে আলুর দাম। বর্তমান বাজারে আলু ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা মাস খানেক আগেও ১৮ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হতো।

আলুর দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পণ্য মজুদ রাখার অভিযোগ করছে ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে এক ব্যবসায়ী বলেন, “আলু এখন পরিপক্ব ফলে মজুদ রাখতে পারে বড় ব্যবসায়ীরা। আর সেজন্যেই দামটা একটু বেশি।” 

স্বল্প মূল্যের পণ্য হিসেবে পরিচিত আলুর দাম বৃদ্ধিতে নাকাল ক্রেতারা। এক ক্রেতা সংবাদ প্রকাশকে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “দাম তো সবকিছুরই  বেশি। এগুলো বলে আর লাভ কী?”

আলুর দাম বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, “এবার আলুর আবাদ বেশি হলেও ফলন কম হয়েছে। এতে হিমাগারগুলো বেশ ফাঁকা রয়েছে। সাধারণত এই সময়ে হিমাগারগুলো আলুতে ভরা থাকে। এবার সে অবস্থা না থাকায় বাজারে আলুর সংকটের আশঙ্কা থেকে দাম বাড়তে শুরু করেছে।” সরকারকে বাজারের প্রকৃত অবস্থা জেনে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।

টিসিবি বলছে, বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। এক মাস আগেও এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা। এক মাসে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। আর পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকলেও ব্যবসায়ীদের কাছে আমদানি করা যে পেঁয়াজ ছিল, তা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। এক মাসের ব্যবধানে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৯ শতাংশ।

কয়েক বছর ধরে দেশে পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও এবার কম হয়েছে। এ ছাড়া পেঁয়াজ ওঠানোর পর এবার পচনের হারও বেশি ছিল। দেশের কৃষকদের সুরক্ষা দিতে পেঁয়াজের আমদানিও বন্ধ। সামনে আসছে কোরবানির ঈদ। সব মিলিয়ে পেঁয়াজের বাজার বাড়তে শুরু করেছে। তবে আমদানির অনুমতি দিলে, বাজার দ্রুত নেমে আসবে বলে মনে করেন আমদানিকারকেরা।

আদা ও রসুনের বাজারও বাড়তি। টিসিবির হিসাবে, ঢাকার বাজারে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। এক মাসের ব্যবধানে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ৭২ শতাংশ। আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। তবে বাজারে এই রসুনের দাম কেজিতে আরও ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দেখা গেছে।

আর টিসিবির দর অনুযায়ী আমদানি করা চীনা আদার দাম গত এক মাসে বেড়েছে ২৮ শতাংশ। কেজিতে সর্বোচ্চ দাম পড়ছে ৩২০ টাকা। পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে দাম আরও কিছুটা বেশি—৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। আর দেশি আদার সামান্য যা বাজারে আসে, এর কেজি ২২০ থেকে ২৪০ টাকা। আদার বাজার প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর।

রাজধানীর শ্যামবাজারের আমদানিকারক আবদুল মাজেদ বলেন, “পেঁয়াজের উৎপাদন কম হয়েছে, পেঁয়াজ এবার নষ্ট হয়েছেও বেশি। তাতে বাজারে সংকট আছে। তবে এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। যেহেতু ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো, তাতে আমদানির অনুমতি দিলে দ্রুত দাম নেমে আসবে। আর আদা ও রসুনের বাজার যেহেতু প্রায় পুরোটা আমদানিনির্ভর, সুতরাং ঈদুল আজহা সামনে রেখে পণ্য দুটি আমদানিতে ব্যবসায়ীদের ডলারের নিশ্চয়তা দিতে হবে। অন্যথায় বাজার আরও বাড়তে পারে।”

Link copied!