• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

বঙ্গবাজারের বিষাদের ভোর আর যত বিধ্বংসী আগুন


বিজন কুমার
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩, ০৭:৩৫ পিএম
বঙ্গবাজারের বিষাদের ভোর আর যত বিধ্বংসী আগুন
সংবাদ প্রকাশ গ্রাফিক্স

কালের যাত্রায় শেষ হতে চলছে আরেকটি বছর। ক্যালেন্ডারের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে বিদায় নেবে ২০২৩ সাল। নতুন সূর্যের মতো বর্ষপঞ্জীতে শোভা পাবে খ্রিষ্টীয় ২০২৪ সাল। নতুন বছরকে বরণ করার প্রস্তুতির পাশাপাশি চলছে বিদায়ী বছরের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসাব।

নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার সাক্ষী ২০২৩ সাল। এ বছর একাধিকবার শিরোনাম হয়েছে ভয়াবহ সব অগ্নিকাণ্ড। বিশেষ করে রাজধানীর কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির পাশাপাশি সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নিঃস্ব হয়েছেন অনেক মানুষ।

বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ড


২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল রাতের অন্ধকার শেষে আসে এক বিষাদের ভোর। ঘড়িতে তখন ৬টার একটু বেশি। গুলিস্তানের বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের জীবনে নেমে আসে অন্ধকারের কালো ছায়া। বিধ্বংসী আগুন ছাইভস্ম করে দেয় তাদের সব স্বপ্নের অবলম্বনকে।

বিষাদের সেই ভোরে বঙ্গবাজারের ৪টি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।  সকাল ৬টা ১০ মিনিটে এ ঘটনার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।  সে সময় দেওয়া ফায়ার সার্ভিসের তথ্যে বলা হয়, প্রায় ৫০টি ইউনিট অগ্নিনির্বাপণে কাজ করে। এছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সাহায্যকারী দলও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। সকলের সমন্বয়ে প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।  

ওই দিন সকাল থেকেই পুরো বঙ্গবাজার এলাকা ভারি হয়ে উঠে ব্যবসায়ীদের আহাজারিতে। যে ঘটনা দেশের গণমাধ্যমগুলো ছাড়িয়ে দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স, এনডিটিভি, আলজাজিরা, আল আরাবিয়াসহ বেশকয়েকটি প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও উঠে আসে। অগ্নিকাণ্ডের সেই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে বেগ পেতে হয়েছিল বেশ।  

ওই ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, “মার্কেটের তৃতীয় তলায় একটি এমব্রয়ডারি টেইলার্স থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।  সিগারেটের আগুন অথবা মশার কয়েলের আগুন থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি ইউনিটের ২ হাজার ৯৬১টি দোকান আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে।” আর দোকান মালিক সমিতির তথ্য মতে, এই অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

নিউ মার্কেট অগ্নিকাণ্ড


বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডের ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই রাজধানীর নিউ মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।  ১৫ এপ্রিল ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস।  এদিন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনাতে নিউ মার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডের মতো, এ ঘটনাতেও থেমে ছিল না ব্যবসায়ীদের কান্না। পাশাপাশি আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়েছিল ৩১জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী। যাদের সবাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

এ ঘটনায় ব্যবসায়ী মালিক সমিতি দাবি করেছিল, “অগ্নিকাণ্ডে প্রায় আড়াই শতাধিক দোকানের সাড়ে তিনশ কোটি টাকার মালামাল পুড়েছে।”

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুন


চলতি বছরের বঙ্গবাজার ও নিউ মার্কেট অগ্নিকাণ্ডের পর আরেকটি অগ্নিকাণ্ড কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে ২০২৩ সালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের তালিকায়। যা চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রায় রাতের শেষার্ধে ঘটেছিল মোহাম্মদপুর এলাকায়।

বলছি মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট অগ্নিকাণ্ডের কথা। ওইদিন রাত পৌনে ৩টায় এই মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে প্রথমেই ফায়ার সার্ভিসের ৭ টি ইউনিট উপস্থিত হয়। এরপর  আরও ১০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরদিন সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

এই ঘটনায় পুরো মার্কেট ধ্বংস হয়ে যায়। এ ঘটনার পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, “ মার্কেটের ২১৭টি দোকান পুড়ে যায়।”
মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দাবি করেছিলেন, “এই মার্কেটে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক দোকান পুড়েছে।” তবে ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও এ ঘটনা মার্কেটের ব্যবসায়ীদের নিঃস্ব করে দিয়েছিল।

মধ্যরাতে বহুতল ভবনে আগুন


চলতি বছরের ১০ অক্টোবর। ঘড়িতে তখন রাত ১টা বেজে ১৮ মিনিট। গভীর ঘুমে যখন রাজধানীবাসী আচ্ছন্ন। ঠিক তখন নগরীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ১৩ তলা বিশিষ্ট সাঈদ গ্র্যান্ড সেন্টারে সপ্তম থেকে নবম তলায় অগ্নিকাণ্ডের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।  এদিন খবর পাওয়ার ৮ মিনিটের ব্যবধানে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রথম ইউনিট। পরে একে একে রাজধানীর বিভিন্ন ফায়ার স্টেশনের ২৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ২২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।  

এরপর বহুতল এই ভবনের অগ্নিকাণ্ডের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে ভোর রাত ৪ টা ৪০ মিনিটে। এতে আহত হয় উত্তরা ও টঙ্গি স্টেশনের দুইজন ফায়ার ফাইটার। ভবনটির অষ্টম তলায় জিম সেন্টার এবং নবম ও দশম তলায় রেস্টুরেন্ট ছিল।

ট্রেনে অগ্নিসংযোগ


বছর শেষে রাজধানীর তেঁজগাও এলাকায় দুর্বৃত্ত কর্তৃক মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ক্ষত হয়ে রয়ে যাবে গোটা দেশবাসীর মনে। কারণ এ ঘটনায় গোটা দেশের মানুষ দেখেছে তিন বছর বয়সী এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু।

পুলিশের সূত্র মতে, ট্রেনটি নেত্রকোণা থেকে ঢাকায় আসছিল। এরপর ট্রেনটি বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে অতিক্রম করলে যাত্রীরা এই আগুন দেখতে পায়। পরে সেই ট্রেনের চালক তেঁজগাও স্টেশনে ট্রেনটি থামায়।

আর ফায়ার সার্ভিসের সূত্র মতে, এই ঘটনায় চার জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।  এর মধ্যে একজন ৩ বছরের শিশু। এ ঘটনায় তেঁজগাও ফায়ার স্টেশনের তিনটি ইউনিট কাজ করেছিল।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আগুন

 


চলতি বছরের ২৮ অক্টোবর থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। এতে দেখা যায়, রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সারাদেশেই প্রায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।  এতে সব থেকে বেশি পুড়েছে যাত্রীবাহী বাসগুলো।

গত দুই মাসের একটু বেশি সময় ধরে এসব অগ্নিসংযোগ সাধারণ মানুষের মনে যেমন আতঙ্ক তৈরি করেছে, তেমন দাগও কেটেছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্যমতে ২৮ অক্টোবর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ২৮৯টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুড়েছে প্রায় ২৮৫টি যানবাহন ও ১৫টি স্থাপনা।

Link copied!