স্বপ্নের মেট্রোরেলে পোস্টারের আবর্জনা


জাহিদ রাকিব
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৩, ০৯:১৫ এএম
স্বপ্নের মেট্রোরেলে পোস্টারের আবর্জনা

জনবহুল রাজধানী ঢাকা। যানজটে মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করার জন্য চালু হয় নান্দনিক স্বপ্নের মেট্রোরেল। সেই মেট্রোরেলের সৌন্দর্য এখন পোস্টারের আবর্জনায় ঢাকা। মেট্রোরেলের পিলারও পোস্টারের কবল থেকে রক্ষা পায়নি। পরিবেশদূষণের মতো ‘দৃশ্য-দূষণ’ এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। 

মেট্রোরেলে এই যত্রতত্র পোস্টার বেশি দেখা যায় জাতীয় পার্টির (জাপা) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাইফুদ্দিন মিলনের। তার মতো অনেক রাজনৈতিক নেতার পোস্টার, ব্যানার, অবৈধ দেয়াল লিখন, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ডের ছড়াছড়ি মেট্রোরেলের বিভিন্ন স্থাপনায়। নির্বাচন থাকুক বা না থাকুক, সারা বছর রাজধানীর বিভিন্ন স্থাপনায় বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছ ও দেয়ালে ঝুলতে থাকে এসব পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড। নেতাদের ছবি যুক্ত করে এগুলো তৈরি করা হয়। জাতীয় নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ রাজনৈতিক কর্মীরা এ ধরনের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড ছাপিয়ে এভাবেই জনগণের সামনে নিজেকে জাহির করছেন।

পরিবেশ বা নগরীর সৌন্দর্য বিনষ্টকারী এসব উপকরণ এখন যেমন মানুষের মধ্যে বিরক্তির উদ্রেক করছে, তেমনি বিকৃত করছে বিষয়বস্তু ও উপস্থাপনের ধরন। এ ছাড়া রয়েছে বিদ্যালয়, কলেজ, কোচিং সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার বিজ্ঞাপন। আর তা দৃশ্যমান থাকে জনবহুল স্থানগুলোতে। এতে ব্যাপকভাবে দৃশ্য-দূষণ হচ্ছে।

নগরীর সৌন্দর্য রক্ষায় সরকার ২০১২ সালে ‘দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১২’ প্রণয়ন করে। এ আইনের ধারা ৪ অনুযায়ী নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থানে দেয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানো যাবে না। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মাঝে মাঝে নিজ উদ্যোগে এসব পোস্টার ব্যানার অপসারণ করে থাকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থেকে শুরু করে মেট্রোরেলের মিরপুর থেকে শুরু করে মতিঝিল পর্যন্ত প্রতিটি পিলারে জাতীয় পার্টির (জাপা) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাইফুদ্দিন মিলনের পোস্টারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার বিজ্ঞাপনে প্রায় ঢাকা পড়েছে। পিলারগুলোতে তেলাপোকা মারার ওষুধ, বাড়িভাড়া, চাকরির সুযোগসহ বিচিত্র ধরনের বিজ্ঞাপনও শোভা পাচ্ছে।

মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগানোর ব্যাপারে জানার জন্য হাজী সাইফুদ্দিন মিলনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করে সংবাদ প্রকাশ। কিন্তু তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি।

নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব সংবাদ প্রকাশকে বলেন, পরিবেশদূষণের কথা এলেই বায়ু, পানি ও শব্দদূষণের কথা বলা হয়। কিন্তু এসব ছাড়াও বর্তমানে এখন আরেকটি দূষণের কথা বলা হচ্ছে, সেটি হলো ‘দৃশ্য-দূষণ’। দৃশ্য-দূষণ একটি নান্দনিক সমস্যা। এটি দূষণের প্রভাবগুলোকে বোঝায়, যা একটি দৃশ্য বা দৃষ্টিভঙ্গি উপভোগ করার ক্ষমতা হ্রাস করে। দৃশ্য-দূষণ প্রাকৃতিক পরিবেশে ক্ষতিকারক পরিবর্তন তৈরি করে মানুষের দর্শনীয় স্থানগুলোকে বিরক্ত করে। যত্রতত্র পোস্টার, বিলবোর্ড, অবৈধ দেয়াল লিখন, আবর্জনা, অ্যান্টেনা, বৈদ্যুতিক তার, ভবন এবং যানবাহনগুলোর উন্মুক্ত অবস্থান প্রায়শই দৃশ্য-দূষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই এর বিরুদ্ধে ব্যক্তি এবং সামষ্টিক উদ্যোগে নিয়ে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে রুখে দাঁড়াতে হবে।

নগরে পোস্টারের এমন দূষণ নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমরা এত দিন নিজেদের উদ্যোগে নগরীর এসব ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন অপসারণ করেছি। তবে এখন থেকে যারা অনুমতি ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পোস্টার লাগাবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে পোস্টার সরানোর জন্য চিঠি দিয়েছি।”

Link copied!