দেশের সব নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সব শ্রেণি-পেশার নাগরিক পেনশন সুবিধা পাবেন। সর্বজনীন পেনশনে রয়েছে চারটি স্কিম। প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবাস স্কিম।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের প্রগতি স্কিম। স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম। স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য সমতা স্কিম।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
গত ২৪ জানুয়ারি সব নাগরিককে পেনশনের আওতায় আনতে সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাস হয়। বিলে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিকের নির্ধারিত হারে চাঁদা পরিশোধ করে ৬০ বছর পূর্তির পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করার বিধান রাখা হয়।
এ ছাড়া বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সিরাও এ আইনের আওতায় নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করে পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা প্রদান শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন, সে বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন। আজীবন বলতে পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়েছে।
প্রবাস স্কিম
বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানরত যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক নির্ধারিত অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় জমা দিয়ে এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। দেশে ফিরে সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করা যাবে। প্রয়োজনে স্কিমও পরিবর্তন করতে পারবেন প্রবাসীরা।
প্রবাসীদের মধ্যে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা পাসপোর্টের তথ্য-উপাত্ত দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে সেটির অনুলিপি পেনশন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। নিয়মিতভাবে পাসপোর্ট নবায়ন বা পুনঃইস্যুর ক্ষেত্রে নবায়নকৃত বা পুনঃইস্যু করা পাসপোর্টের অনুলিপি জমা দিতে হবে।
চাঁদা ও সুবিধা
প্রবাস স্কিমে মাসিক ৫ হাজার কিংবা সাড়ে ৭ হাজার কিংবা ১০ হাজার টাকা কিস্তি দিয়ে যুক্ত হওয়া যাবে। ১০ বছর পূর্তিতে ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে মাসে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা হারে। সাড়ে ৭ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ১১ হাজার ৪৭৭ এবং ১০ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ১৫ হাজার ৩০২ টাকা পাওয়া যাবে। এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। ৪২ বছর পূর্ণ হলে ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা, সাড়ে ৭ হাজার টাকার কিস্তিতে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৯১ টাকা এবং ১০ হাজার টাকার কিস্তিতে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা।
প্রগতি স্কিম
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য এই স্কিম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী বা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক এতে অংশ নিতে পারবেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের জন্য এই স্কিমে অংশ নিলে স্কিমের চাঁদার ৫০ শতাংশ কর্মচারী এবং বাকি ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে।
কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই স্কিমে অংশ না নিলে সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নিজ উদ্যোগে একাই এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।
চাঁদা ও সুবিধা
প্রগতি স্কিমে মাসে ২ হাজার কিংবা ৩ হাজার কিংবা ৫ হাজার টাকা কিস্তি দিয়ে যুক্ত হওয়া যাবে। ১০ বছর পূর্তিতে ২ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে মাসে ৩ হাজার ৬০ টাকা হারে। ৩ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ৪ হাজার ৫৯১ এবং ৫ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা পাওয়া যাবে। এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। ৪২ বছর পূর্ণ হলে ২ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা, ৩ হাজার টাকার কিস্তিতে ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ টাকা এবং ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা।
সুরক্ষা স্কিম
বিধিমালায় বলা হয়েছে, অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যেমন কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেল, তাঁতিরা এই স্কিমে অংশ নিতে পারবে।
চাঁদা ও সুবিধা
সুরক্ষা স্কিমে মাসিক ১ হাজার কিংবা ২ হাজার কিংবা ৩ হাজার কিংবা ৫ হাজার টাকা কিস্তি দিয়ে যুক্ত হওয়া যাবে। ১০ বছর পূর্তিতে ১ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে মাসে ১ হাজার ৫৩০ টাকা হারে। ২ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ৩ হাজার ৬০, ৩ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে ৪ হাজার ৫৯১ টাকা এবং ৫ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা পাওয়া যাবে। এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। ৪২ বছর পূর্ণ হলে ১ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ৩৪ হাজার ৫৬৫ টাকা, ২ হাজার টাকার কিস্তিতে ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা, ৩ হাজার টাকার কিস্তিতে ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ টাকা এবং ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা।
সমতা স্কিম
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক সময় সময় প্রকাশিত আয় সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা (যাদের বর্তমান আয়সীমা বছরে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা) এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।
চাঁদা ও সুবিধা
সমতা স্কিমে মাসিক ১ হাজার টাকা কিস্তি দিয়ে যুক্ত হতে হবে। ১০ বছর পূর্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে মাসে ১ হাজার ৫৩০ টাকা হারে। এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। ৪২ বছর পূর্ণ হলে প্রতি মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা হারে।
উল্লিখিত স্কিমগুলোর বিপরীতে নির্ধারিত পরিমাণ চাঁদা দিলে মাসিক পেনশন পাওয়ার প্রাপ্যতা অর্জিত হবে।






























