• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন

তৃণমূলে সুসংগঠিত আ. লীগ, চলছে প্রার্থী বাছাই


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৩, ০৯:০০ পিএম
তৃণমূলে সুসংগঠিত আ. লীগ, চলছে প্রার্থী বাছাই
প্রতীকী ছবি

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোকে তৃণমূল পর্যায়ে সুসংগঠিত করেছে। একইসঙ্গে গুছিয়ে নিয়েছে নির্বাচনকেন্দ্রিক কাজগুলো। তৃণমূলের আসনগুলোতে গোপন প্রক্রিয়ায় চলছে প্রার্থী বাছাই। মূলত সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই দলটির এই প্রস্তুতি। নিয়মানুযায়ী ২০২৩ এর ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ এর জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা।

এরইমধ্যে দলটির তৃণমূলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। যোগাযোগ বাড়িয়েছেন হাইকমাণ্ডের সঙ্গে। নিজ নিজ এলাকায় পথসভা, উঠান বৈঠকসহ বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তুলে ধরছেন সাধারণ ভোটারদের কাছে। একইভাবে তুলে ধরছেন সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। এসব কিছুই করছেন দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায়। 

ইতোমধ্যে জেলা-উপজেলা এবং নগর-মহানগরের নেতারা নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও ভোট বাড়াতে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। ভোটের আগে জোটের মেরুকরণেও নজর রাখছেন দলটির হাইকমান্ড। দলের নীর্তিনির্ধারণী সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, বিরোধী দলের সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় আওয়ামী লীগ। তবে দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফেরাতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন নেতারা। যাতে কোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছাড়াই নির্বাচনে অংশ নেওয়া যায়। 

অন্যদিকে, দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনাগুলো তৃণমূলে পৌঁছে দিচ্ছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা বলছেন, আগামী নির্বাচনের আগেই সবকিছু ভুলে ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিজ এলাকায় গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। 

এদিকে, দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ অঙ্গীকার তুলে ধরা হবে। নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম প্রধান বিষয় হবে, ২০০৯-২০২৩ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্জন। 

একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ কর্মীরা বর্তমান সরকারের সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকারের কর্মকাণ্ডের তুলনা করবে। পাশাপাশি ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সৃষ্টি হওয়া পরিস্থিতি নিয়েও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলবেন তারা। 

এছাড়া দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না হলেও বিভিন্ন জরিপ এবং তথ্য সংগ্রহের মাধমে গোপন প্রক্রিয়ায় এ কাজ এগিয়ে রাখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

এ বিষয়ে ঢাকা-৫ আসনের প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার বড় ছেলে ও ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মশিউর রহমান মোল্লা সজল বলেন, “আমার বাবা চারবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। প্রতিটি নির্বাচনে জয়লাভ করতে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করেছি আমরা। এতে নৌকার বিজয় সহজ হয়েছে।” তিনি আরো জানান, দ্বাদশ নির্বাচনের আগেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকা-৫ নির্বাচনী এলাকার ডেমরা থানাধীন প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করা হবে। 

এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, নির্বাচন পরিচালনা ও প্রচারের জন্য সংসদীয় আসনভিত্তিক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। স্থানীয় এমপি ও থানা আওয়ামী লীগের নেতারা এই কমিটিতে থাকছেন। এই কমিটির অধীনে গঠন করা হচ্ছে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এসব কমিটি গঠনের কাজ পুরোদমে শুরু হবে।

এ বিষয়ে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান মজনু বলেন, “জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় প্রধান নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেই মোতাবেক মাঠে কাজ করছি।” 

একইকথা জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত। তিনি বলেন, “দেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে দ্বাদশ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে হবে।” এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সক্ষম, অসক্ষম বুঝি না যারা সংগঠনের নেতা, তাদের এটাতো করতেই হবে।”

কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান লায়ন আলী আকবর বলেন, “কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুয়ায়ী আমরা মাঠে আছি। আগামী নির্বাচনে তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে যোগ্য এবং জনপ্রিয়, দক্ষ এবং ক্লিন ইমেজের নেতাদের নৌকার মনোনয়ন দিলে ৩শ আসনেই আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জন করবে।”

মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের একজন নেতা বলেন, “দল গোছানোর কাজ শেষ। এখন সবার সাথে যোগাযোগ রাখছি। সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে আওয়ামী লীগের জন্য ভোট চাইছি।” এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মানুষের সাথে আছি। সাধারণ মানুষের মধ্যে দলের পরিষ্কার মনোভাব তুলে ধরছি।”

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্লেন (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, “প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সব সময় নির্বাচন করতে প্রস্তুত। ইতোমধ্যে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। দলের নেতারা- সুশীল সমাজ, যুবক-তরুণ ও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষদের কথা শুনেছেন। তারা দেশটাকে কীভাবে দেখতে চায়, সেই তথ্যগুলো আমরা নিচ্ছি। এগুলো আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে থাকবে।” তিনি আরো বলেন, “নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জনগণের কাছে সত্য তুলে ধরব। একই সঙ্গে আমাদের সময়ে যে উন্নয়নগুলো হয়েছে সেগুলো তৃণমূলে গিয়ে মানুষকে জানাব।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য আমাদের পুরোদমে প্রস্তুতি রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের কৌশল চূড়ান্ত করা, ইশতেহার তৈরি এবং মনোনয়নের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজে বের করতে জরিপ কাজ চালানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছি।” তিনি আরো জানান, “আওয়ামী লীগ ধরেই নিচ্ছে, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে আমাদের চূড়ান্ত নির্বাচনী কৌশল নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর।”
 

Link copied!