সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে নবগঠিত পে কমিশন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী সংগঠন নিজেদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে সর্বনিম্ন বেতন কত নির্ধারণ করা হতে পারে? সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন পে কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়।
জানা গেছে, অধিকাংশ সরকারি কর্মচারী সংগঠনই সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারনের প্রস্তাব দিয়েছে।
সংগঠনগুলো অন্তত ৭০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও ৭০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধিত ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে কয়েকটি সংগঠন।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র আব্দুল মালেক এ বিষয়ে দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব দিয়েছি সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা এবং গ্রেড সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে ১২টি করা হোক।’
সর্বশেষ ২০১৫ সালে পে স্কেল হয়েছে, ২০২০ সালে হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ কারণে কর্মচারীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নিয়মিত হলে ২০২০ সালে বেতন দ্বিগুণ হতো এবং ২০২৫ সালে তা ৩৩ হাজার টাকায় পৌঁছত।’
তিনি আরো বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করেই আমরা ৩৫ হাজার টাকার প্রস্তাব দিয়েছি। বর্তমানে বেতন বৈষম্য রয়েছে ১:১০ অনুপাতে, যা কমিয়ে ১:৪ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আমরা চাই, এই বৈষম্য কমে আসুক। পে স্কেল সাধারণত ৫ বছর পর পর হওয়া উচিত, কিন্তু ২০২০ ও ২০২৫ দুটি সময়েই তা হয়নি। এতে সরকারি কর্মচারীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।’
প্রাইভেট খাতের বেতন বাড়ানোর দাবিতেও ফেডারেশন গুরুত্ব দিয়েছে জানিয়ে আব্দুল মালেক বলেন, ‘একজন মানুষ দিনে তিন বেলা যদি ডাল-ভাত-ভর্তা খান, তবু খরচ হয় প্রায় ১৫০ টাকা। ছয় সদস্যের পরিবারের জন্য মাসে অন্তত ২৭ হাজার টাকা লাগে।
এর সঙ্গে বাসাভাড়া, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সব খরচ যোগ করলে ৫০ হাজার টাকাতেও চলে না।’
পে কমিশনের সূত্র জানায়, নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে অনলাইনে দুই হাজারের বেশি সংগঠন মতামত দিয়েছে। মতামত যাচাই-বাছাই শেষে কমিশন প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। মতবিনিময় শেষে সব প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সুপারিশের খসড়া তৈরি করা হবে। সদস্যদের সম্মতিতে সেটি চূড়ান্ত করে সরকারকে জমা দেওয়া হবে।
কমিশনের সদস্যদের মতে, নতুন পে স্কেলের মূল লক্ষ্য হবে বেতন বৈষম্য হ্রাস করা। এ জন্য বিদ্যমান গ্রেড কাঠামো পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্রেড সংখ্যা কমানো নিশ্চিত হলেও, ঠিক কতটি গ্রেড থাকবে এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত কী হবে তা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।
এর আগে আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে জমা দেওয়া হতে পারে বলে জানান শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার। তিনি বলেন, ‘আমরা যে ইঙ্গিত পাচ্ছি, তাতে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ, এমনকি ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বাড়তে পারে।’
সে সময় শিক্ষাসচিব রেহানা পারভীন জানান, খুব শিগগির জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা করা হবে। শিক্ষকদের বাড়িভাড়াসহ বেতনের বিষয়গুলোও নতুন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।






























