• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মাইলফলক হয়েছে যেসব স্বপ্নছোঁয়া উন্নয়ন


হাবীব ইমন
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩, ০৭:৪৩ পিএম
মাইলফলক হয়েছে যেসব স্বপ্নছোঁয়া উন্নয়ন
মাইলফলক হয়েছে যেসব স্বপ্নছোঁয়া উন্নয়ন

গত এক বছরে দেশের উন্নয়নে বেশ কিছু অভাবনীয় ঘটনা দেখা গেছে। বৈশ্বিক করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সমগ্র বিশ্বই একটি সংকটকাল অতিক্রম করছে, যার নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এসব সংকট ও মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের মাইলফলক ছুঁয়েছে। তাই ২০২৩ সালকে উন্নয়নের বছর বলা যায়। এসব গৌরবময় উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সাধারণ মানুষ আজ উচ্ছ্বসিত।  

মেট্রোরেল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের ৪ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল সার্ভিসের দ্বিতীয় ধাপের উদ্বোধন করেন। এরপর ৫ নভেম্বর থেকে উত্তরা-মতিঝিল রুটে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলছে মেট্রোরেল। বেলা সাড়ে ১১টার পর মতিঝিল-আগারগাঁও রুটে চলাচল বন্ধ থাকলেও উত্তরা-আগারগাঁও সেকশনে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলছে মেট্রোরেল।

২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করা হয়। মূলত যানজট নিরসনে রাজধানীজুড়ে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ২০ টাকা আর সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা।

উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মোট ১৭টি স্টেশন চালু হলে এই ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করতে মেট্রোরেলের মোট সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট। মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী এবং প্রতিদিন ৫ লাখ যাত্রী বহন করতে সক্ষম হবে এবং প্রতি চার মিনিটে প্রতিটি স্টেশনে একটি ট্রেন আসবে।

টানেলের যুগে বাংলাদেশ

চলতি বছরের ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম যোগাযোগ পথ টানেলের ফলক উন্মোচন করা হয়। এটি উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নদীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম সড়ক টানেল এটি।

এর আগে, ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের খননকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। নির্মাণকাজ শুরুর প্রায় সাড়ে চার বছর পর টানেলের উদ্বোধন করা হয়। টানেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর গাড়ি চলাচল শুরু হয় ২৯ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে।

দেশের প্রথম টানেলের সংযোগ সড়কসহ মোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। প্রধান টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এ ছাড়া সংযোগ সড়ক ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার লম্বা। আনোয়ারা প্রান্তে থাকা একমাত্র ভায়াডাক্ট বা ওভারপাস ৭২৭ মিটার দীর্ঘ। কর্ণফুলীর টানেল শুধু চট্টগ্রাম শহরের দুই প্রান্তকে যুক্ত করেনি, হয়েছে শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের যোগসূত্র। মাটির প্রায় ১৪০ ফুট গভীরে নির্মিত ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের টানেলটি গাড়িতে পাড়ি দিতে সময় লাগছে তিন থেকে সাড়ে তিন মিনিট। টানেলে দুটি টিউব রয়েছে। এই টিউবগুলো কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে ১০৫ ফুট গভীরে নির্মাণ করা হয়েছে। গাড়ির জট যাতে না হয়, সে জন্য রয়েছে ২০টি টোল বুথ।

পর্যটন শহর কক্সবাজারে রেলের যাত্রা

বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে এখন ট্রেনে করেই যাওয়া যাচ্ছে। রেললাইনের দুই পাশের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে নিরাপদ ও দ্রুত সময়ে কক্সবাজারে পৌঁছে যাচ্ছেন পর্যটকরা। ভাড়াও থাকছে সহনীয় পর্যায়ে। এত দিন ধরে এই শহরে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল সড়কপথ। সরু মহাসড়ক হওয়ায় সে পথ পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যেত যাত্রীদের। ছিল দুর্ঘটনাসহ নানা ধরনের ঝুঁকি ও ঝক্কিঝামেলা।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী থেকে কক্সবাজার সদর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ১১ নভেম্বর নতুন নির্মিত রেলপথের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের (ফার্স্ট ট্র্যাক) অন্তর্ভুক্ত একটি প্রকল্প। সময় ডিসেম্বর থেকে দুটি ট্রেন চালুর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর ১ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ঢাকার উদ্দেশ্যে কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যায়। রাত ৯টা ১০ মিনিটে এই ট্রেন ঢাকায় পৌঁছায়। ফিরতি ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায় রাত সাড়ে ১০টায়। এই রুটে ট্রেনের গতিসীমা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। 
এই রুটে আপাতত দুটি ট্রেন চলাচল করছে। ট্রেনের সর্বনিম্ন ভাড়া যেটি ধরা হয়েছে সেটি হচ্ছে ১৮৮ টাকা। আর এটি নন এসি মেইল ট্রেন। সর্বোচ্চ ভাড়া এসি বার্থে ১ হাজার ৭২৫ টাকা। বর্তমানে রেলের যে ভাড়ার হার আছে সেই অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই ট্রেনে মোট ১৬টি কোচ রয়েছে। আসন রয়েছে ৭৮০টি। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ২ হাজার ৩৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ওইদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্সপ্রেসওয়ের ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার অর্থাৎ বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করেন। দ্রুতগতির এই উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।

উদ্বোধনের পর ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা থেকে কাওলা-তেজগাঁও পর্যন্ত অংশে সাধারণ যানবাহন চলাচল করতে খুলে দেওয়া হয়। এই সড়ক দিয়ে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেটে পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট। যা যানজটের কারণে এখন প্রায় ১ ঘণ্টার মতো লাগে।
শহরের যানজট নিরসন করতে প্রকল্প হাতে নেওয়ার এক দশকেরও বেশি সময় পরে এটির উদ্বোধন করা হয়। বিদেশি বিনিয়োগে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) অধীনে পরিবহন খাতে এটাই প্রথম প্রকল্প। সম্পূর্ণ এক্সপ্রেসওয়ে অর্থাৎ তেজগাঁও-কুতুবখালী পর্যন্ত ২০২৪ সালের জুনে চালু করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শহরের যানজট কমাতে যে দুটি এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করা হচ্ছে তার মধ্যে একটি। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, উড়ালসেতুর সম্পূর্ণ সুবিধা পেতে দুটি এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দুটি এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে বাংলাদেশের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকা হয়ে যাতায়াতের সময় রাজধানীর যানজট এড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইউরেনিয়ামের যুগে প্রবেশ

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়া কর্তৃক ইউরেনিয়াম হস্তান্তরের মাধ্যমে ৫ অক্টোবর পারমাণবিক শক্তির যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে নিউক্লিয়ার পাওয়ার সমৃদ্ধ দেশগুলোর তালিকায় ৩৩তম সদস্য হিসেবে স্থান পায় বাংলাদেশ। আশা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের শুরু থেকে রূপপুর থেকে মিলবে বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ।

পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারকারী দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। তবে কোনো দেশের ওপর আক্রমণ করার জন্য নয়, নিজের দেশের মানুষের কল্যাণে সেই পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করা হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বাংলাদেশের হাতে এসেছে ইউরেনিয়াম। ৫ অক্টোবর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে ভার্চুয়ালি ইউরেনিয়াম হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে নিউক্লিয়ার পাওয়ার সমৃদ্ধ দেশগুলোর তালিকায় ৩৩তম সদস্য হিসেবে স্থান পায় বাংলাদেশ। আশা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের শুরু থেকে রূপপুর থেকে মিলবে বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, এই পরমাণু শক্তিকে শান্তিপূর্ণ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে। এটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার দিকে আরও একটি পদক্ষেপ বলেও জানান তিনি।

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ

স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর দুই মাস পর চলতি বছরের ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে নতুন ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে রেলের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। প্রসার ঘটেছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কারখানার, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, বাংলাদেশ রেলওয়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেল ট্র্যাক নির্মাণ করছে। এর ৮২ কিলোমিটার অংশ ঢাকা ও ভাঙ্গাকে সংযুক্ত করে, যা ১০ অক্টোবর খুলে দেওয়া হয় এবং এর যশোর সংযোগকারী অবশিষ্ট অংশটি আগামী বছরের জুনে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর আগে, পদ্মা সেতুতে পাথরহীন রেললাইনের কাজ শেষ হওয়ার পর গত ৪ এপ্রিল ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত পর্যন্ত ট্রায়াল ট্রেন চালায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত বছরের ১৪ অক্টোবর ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প’র আওতায় ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল সংযোগ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। এটি উদ্বোধন করেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এতে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক।

মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দর চ্যানেল

এ বছরের ১১ নভেম্বর কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে বহুল প্রতীক্ষিত দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে এই চ্যানেলে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এই বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির গেম চেঞ্জার হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। জোয়ার-ভাটায় যেকোন সময়ে ৮হাজার টিইইউএস’র জাহাজ ভিড়তে পারবে এখানে। ফলে আন্তর্জাতিক শিপিং লাইনগুলোর জন্য বাংলাদেশে জাহাজ নিয়োজিত করার সুবিধা বাড়বে। এতে পণ্য পরিবহনে খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। এ বন্দরকে ঘিরে মাতারবাড়ী-মহেশখালী এলাকায় ব্যাপক শিল্পায়নসহ গড়ে উঠবে অর্থনৈতিক অঞ্চল। ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকসহ পেশাজীবীদের জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের বেকার সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে এই বন্দর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৬ সালে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই বন্দরের মাধ্যমে ২০২৬ সালের মধ্যে আনুমানিক ০.৬ থেকে ১.১ মিলিয়ন টিইইউস (বিশ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আনুমানিক ২.২ হতে ২.৬ মিলিয়ন টিইইউস কন্টেইনার কার্গো হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মাতারবাড়ী বন্দরকে কেন্দ্র করে এখানে বাণিজ্যিক হাব গড়ে তোলা হবে। চট্টগ্রাম বন্দর যেমন দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন, তেমনি মাতারবাড়ী বন্দরও দেশের অর্থনীতির জন্য আরেকটি প্যারালাল লাইফ লাইনে পরিণত হবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে

চলতি বছরের ১৪ নভেম্বর উচ্চ গতির সড়ক পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের প্রথম ১৪ লেনের এ সড়কের নাম ‘শেখ হাসিনা সরণি’। এটি উদ্বোধনের মাধ্যমে ঢাকার পূর্ব থেকে পশ্চিমে নতুন সংযোগ তৈরি হয়। যদিও শতভাগ কাজ শেষ হওয়ার আগেই সাধারণের চলাচলের এ পথটা খুলে দেওয়া হয়।

পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে হলো, ঢাকার নতুন গেইটওয়ে। এটি দেশের প্রথম ১৪ লেনের মহাসড়ক। যার ৮টি এক্সপ্রেসওয়ে। এরই মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ; কুড়িল থেকে কাঞ্চন সড়ক বাতির কাজও শেষ। মহাসড়কের দুপাশে রয়েছে ১০০ ফুট খাল। বিশেষ ব্যবস্থা থাকায় ভারি বৃষ্টিতেও এ পথে তৈরি হবে না কোনো জলাবদ্ধতা। এ ছাড়া শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করতেও এই প্রকল্প বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে সড়ক ডিভাইডারে বসেছে ৩৩ হাজার নানা জাতের গাছ। রোড মার্কিংয়ের কাজ শেষ হওয়ায় যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। কুড়িল থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত ১২.৩০ কিলোমিটার দেশের প্রথম ১৪ লেনের সড়ক এটি। এই পথে কুড়িল থেকে কাঞ্চন যাওয়া যাবে বিনা বাধায়।
কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত বাকি পথটার দুপাশে আছে আট লেনের রাস্তা। যা আশপাশের এলাকাকে এই সড়কে যুক্ত করবে এবং সঙ্গে রয়েছে দুই পাশের খাল। এটি কেবল এই এলাকা না, ঢাকা উত্তরের একটি বড় অংশের জলাবদ্ধতা নিরসনে সহায়তা করবে।

মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

জাপানের ঋণসহায়তায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে। ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এ কেন্দ্রে। প্রথম ইউনিট ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধন করেন। একই সক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট ডিসেম্বরের শেষ দিকে চালু হতে পারে।

কয়লা পরিবহন খরচ কম হওয়ায় ও সহজ শর্তে ঋণের কারণে মাতারবাড়ী কেন্দ্র তুলনামূলক কম দামে বিদ্যুৎ দিতে পারবে। চাহিদা থাকলে প্রথম ইউনিটের পুরোটা সরবরাহ করা যাবে। পর্যাপ্ত কয়লাও মজুত আছে।

দেশে আমদানি করা কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর সঙ্গে যুক্ত হলো মাতারবাড়ী কেন্দ্র। গত ২৯ জুলাই থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করছে কেন্দ্রটি। এর পর থেকে চাহিদা বুঝে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এক দিনে সর্বোচ্চ ৬১৮ মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন করেছে কেন্দ্রটি।

Link copied!