• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সাকরাইন উৎসব ঘিরে আনন্দ আর ক্ষোভ


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৪, ০৯:২৬ পিএম
সাকরাইন উৎসব ঘিরে আনন্দ আর ক্ষোভ
সাকরাইন উৎসব। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

বাসার ছাদে উড়ছে রঙ-বেরঙের ঘুড়ি। নীল আকাশজুড়ে ঘুড়ির সমারোহ। পাশেই সাউন্ডবক্সে বিকট শব্দে বাজছে হিন্দি- বাংলা গান। গানের তালে তালে নাচছে উঠতি বয়সী ছেলেরা। মাঝে মাঝে বিকট শব্দে ফোটানো হচ্ছে আতশবাজি। রাতে রয়েছে ফানুস উড়ানোর আয়োজন।

বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশে পৌষ মাসের শেষ দিনটিকে ঘিরে পুরান ঢাকায় প্রতিবছরই পালিত হয়ে থাকে সাকরাইন উৎসব। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে এসবের আয়োজন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ফানুস উড়ানো, পটকা ফোটানো নিরুৎসাহিত করা হলেও সে কথা কেউ কানে নেয়নি। কোথাও কোথাও বিকট শব্দ শুনে শিশুদের অবিরাম কান্না করতে দেখা গেছে।

রোববার (১৪ জানুয়ারি) সকালে সূর্যোদয়ের পর থেকেই বাসাবাড়ির ছাদে চলে ঘুড়ি ওড়ানোর আয়োজন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ আয়োজন বাড়তে থাকে। ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য সুতা-মাঞ্জা দেওয়া থেকে শুরু করে পিঠা উৎসবেরও আয়োজন চলে পুরান ঢাকার অনেক বাড়িতে।

বিভিন্ন নাম দেওয়া ঘুড়ির মধ্যে চোখদার, পানদার, বলদার, দাবাদার, লেজওয়ালা, পতঙ্গ বেশ সাড়া ফেলেছে। নিজের ঘুড়িকে সবচেয়ে ওপরে তোলার প্রতিযোগিতার সঙ্গে ঘুড়ি কাটাকাটির লড়াইয়ে বেশি আনন্দ পায় কিশোর-কিশোরীরা।

স্থানীয় এক বাসিন্দা সুকুমার রায় বলেন, “সাকরাইনের দিন বিকেলে পুরান ঢাকার আকাশে ঘুড়ি দিয়ে কাটাকাটির খেলা উপভোগ করেন সবাই। নানা রঙ আর বাহারি আকারের ঘুড়ি নিয়ে এতে অংশ নেন তরুণ-তরুণীরা। সন্ধ্যা নেমে আসলে উৎসবের আমেজে আসে ভিন্নতা। রঙ বেরঙের আতশবাজি ও ফানুসে ছেয়ে যায় পুরান ঢাকার আকাশ। এসব অনুষঙ্গের সঙ্গে চলে গান-বাজনা এবং নাচানাচি। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ উৎসব।”

পুরান ঢাকার বাংলাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী অজিত কুমার সেন বলেন, “সাকরাইন আমাদের পুরান ঢাকার প্রাচীন ঐতিহ্য। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমাদের বাপ- দাদারা এই আয়োজন করে আসছেন। আগে পিঠা বানানো হতো। এখন বাড়িতে পিঠা বানানোর আয়োজনটা কমে গেছে। তবে এখনো সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে থাকেন। আর ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা দিনটিতে সকালে পিঠা, মোয়াসহ নানা ধরনের খাবার বিলি করেন প্রতিবেশীদের মাঝে। সাকরাইন উৎসবকে ‘পৌষ সংক্রান্তি’ বা ‘ঘুড়ি উৎসবও’ বলা হয়।”

পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জ, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, বাংলাবাজার, পাতলাখান লেন, কাগজীটোলা, শাঁখারিবাজার, কলতাবাজার ও নারিন্দা এলাকার অনেক বাসার ছাদে বিকট শব্দে সাউন্ড সিস্টেমের কারণে ক্ষোভ আর বিরক্তি তৈরি হয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে।

শনিবার রাতে বিকট শব্দের কারণে ঘুমাতে পারেননি নারিন্দা পীর সাহেব গলির বাসিন্দা আহসান। তিনি জানান, উচ্চ শব্দের কারণে ঘুমানো দায় হয়ে গিয়েছে। সারা রাত ধরে সাউন্ড সিস্টেম বাজানো হয়েছে। বৃদ্ধ ও ছোট বাচ্চাদের ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে।

ফরাশগঞ্জের সিয়াম বলেন, “কাল রাতে বাড়ি থেকে ঢাকায় এসেছি। চারদিকে আলোর ঝলকানি দেখে ভেবেছি কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে। কিন্তু রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবহার, সঙ্গে আতশবাজি ফোটানোর শব্দ শুনি। সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারি পুরান ঢাকার উৎসব সাকরাইন পালিত হবে আজ। সে জন্য এই মহারণ। এই অতিরিক্ত শব্দের ব্যবহারে কাল রাতে ঘুমাতে পারিনি। যার ফলে মাথাব্যথা করছে।”

কলতাবাজার এলাকার আসিফ জানান, তার বাবা বৃদ্ধ। উচ্চ শব্দের কারণে ঘুমাতে কষ্ট হচ্ছে। সারাদিন ধরে ছটফট করছেন। এমন অবস্থায় আসলে বৃদ্ধ মানুষের ঘরে থাকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দক্ষিণ মৌসুন্ডি এলাকার একজন ৯৯৯ ফোন করে অভিযোগ করলে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসে যুবকদের উঠবস করায়। পরে তারা সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ করে চলে যেতে বাধ্য হয়।

এদিকে, সাকরাইন উৎসবে ঘুড়ি উড়িয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। পুরান ঢাকার ধুপখোলা মাঠে ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবে ঘুড়ি উড়ান তিনি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদের সভাপতিত্বে সাকরাইন উৎসব ও ঘুড়ি ওড়ানো অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-৫ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মশিউর রহমান মোল্লা সজল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফি, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ৫০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মাসুম মোল্লা, ৬২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মোস্তাক আহমেদ।

শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, পুরান ঢাকার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী উৎসব এই সাকরাইন। ছেলে-বুড়োসহ সবাই এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। সবাই অনেক মজা করে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। এভাবে সবাইকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। ঢাকাবাসীর ঐতিহ্য আমরা ঢাকাবাসীর মধ্যে ফিরিয়ে দিতে চাই, শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সাম্প্রদায়িকতার বিপরীতে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বেড়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী হাত ধরে আমরা উন্নত ঢাকা নির্মাণ করব।

Link copied!