বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ নামের নতুন আইন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। মঙ্গলবার (৬ মে) এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। সেখানে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক নিয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
আসিফ নজরুল বলেন, “সাইবার সুরক্ষা আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই অধ্যাদেশে অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো সাইবার স্পেসে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌন হয়রানিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে আগের আইনের ৯টি ধারা বাতিল করা হয়েছে, যা ছিল কুখ্যাত ধারা, এসব ধারাতেই ৯৫ শতাংশ মামলা হয়েছিল। মামলাগুলোও এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।”
আইন উপদেষ্টা বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া উপস্থাপন করা হয়। কিছু সংশোধন শেষে এই সপ্তাহে গেজেট আকারে প্রকাশ হতে পারে। এ ছাড়া কিছু কিছু ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে। মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে দুটি অপরাধ রাখা হয়েছে, একটি হচ্ছে নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতনমূলক কন্টেন্ট প্রকাশ, হুমকি দেওয়া। আরেকটি হচ্ছে ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানো, যেই ঘৃণা ছড়ানোর মধ্যে দিয়ে সহিংসতা উসকে দেওয়া হয়। ধর্মীয় ঘৃণাকে কঠোরভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যাতে ভুল বোঝাবুঝি না হয়, কেউ কাউকে হয়রানি করতে না পারে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এই প্রথমবারের বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যদি কোনো সাইবার অপরাধ করা হয়, সেটাকে শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে।”
আসিফ নজরুল বলেন, “মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে ওই দুটি ক্ষেত্রে কারও বিরুদ্ধে মামলা হলে এটা আমলে আদালতে যাবে, যাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট যদি দেখেন—এই মামলার কোনো যৌক্তিকতা নেই, তাহলে প্রি ট্রায়াল স্টেজে তিনি মামলা বাতিল করে দিতে পারবেন। অর্থাৎ চার্জশিটের জন্য অপেক্ষা করা লাগবে না। যদি দেখেন সম্পূর্ণ ভুয়া মামলা, এই মামলার কোনো ভিত্তি নেই, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই মামলা বাতিল করে দিতে পারবেন।”
আসিফ নজরুল আরও বলেন, “বিলুপ্ত করা বিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় শহীদ বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কিত বিদ্বেষ বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার যে দণ্ড দেওয়ার বিধান সেটা বিলুপ্ত করা হয়েছে। এই বিধানে প্রচুর হয়রানিমূলক মামলা হতো। মানহানিকর তথ্যপ্রকাশের ক্ষেত্রে বিধান যেটা এতে প্রচুর মামলা হতো, অনেক সাংবাদিক এই মামলার ভুক্তভোগী হয়েছেন, এই ধারা সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে। আরেকটা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে—এই ধরনের কোনো কন্টেন্ট বা কথাবার্তা বলায় প্রচুর মামলা হতো, এটাও সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে। আক্রমণাত্মক বা ভীতিকর তথ্য উপাত্ত প্রকাশ এটাও সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে।”