• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ড্রাইভিং লাইসেন্স করবেন যেভাবে


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৩, ০৬:৫১ পিএম
ড্রাইভিং লাইসেন্স করবেন যেভাবে

ড্রাইভিং লাইসেন্স একজন চালকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ নথি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত মানুষ জানতে চায়- ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনের প্রক্রিয়া কিংবা কীভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স করব, ড্রাইভিং লাইসেন্সে ভূল হলে করণীয় কী, ড্রাইভিং লাইসেন্সের খুঁটিনাটি, ড্রাইভিং লাইসেন্স হারিয়ে গেলে করণীয় কী, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের প্রক্রিয়া কী ইত্যাদি। 

ড্রাইভিং লাইসেন্স শুধুমাত্র মোটরগাড়ি চালানোর অনুমতিপত্রই নয়, এটি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কার্যকলাপে ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তকরণে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া, এর সঙ্গে চালকের কারিগরি দক্ষতার পাশাপাশি পথচারি, এমনকি চালকের নিজেরও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িয়ে থাকে।

আপনার যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকে তাহলে আপনি কোনো মোটরযান চালাতে পারবেন না। ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতিরেকে গাড়ি চালানো অপরাধ। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে বাংলাদেশ পুলিশ সেক্ষেত্রে আপনাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। তাহলে চলুন লাইসেন্স করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জেনে নেওয়া যাক…

ড্রাইভিং লাইসেন্সের পূর্বশর্ত হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স। ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনকারীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাশ। অপেশাদারের জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য বয়স ন্যূনতম ২১ বছর হতে হবে। মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া

গ্রাহককে প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অনলাইনে (bsp.brta.gov.bd)-এর মধ্যমে আবেদন করতে হবে। অনলাইন সিস্টেম থেকে তার লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু হবে এবং গ্রাহক সঙ্গে সঙ্গে সিস্টেম থেকেই তার শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। এরপর ২/৩ মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তাকে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে নির্ধারিত কেন্দ্রে ‘লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্টে’ অংশগ্রহণ করতে হবে। এ সময় প্রার্থীকে প্রয়োজনীয় প্রমাণক, তার লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স (মূল কপি) ও লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য সঙ্গে কলম আনতে হবে।

লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

১। অনলাইনে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে।
২। আবেদনকারীর ছবি


৩। রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)। মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের ফর্মের জন্য  এখানে ক্লিক করুন ]
৪। জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)
৫। ইউটিলিটি বিলের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি),
৬। বিদ্যমান ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)
৭। অনলাইনে আবেদন দাখিলের সময় ভুয়া তথ্য প্রদান করা হলে তার লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৮। নির্ধারিত ফি, ১ ক্যাটাগরি-৫১৮/-টাকা এবং ২ ক্যাটাগরি-৭৪৮/-টাকা অনলাইনে পরিশোধ।

লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় একটি নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি প্রদান করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেনেন্সের জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। গ্রাহকের বায়োমেট্রিক (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণপূর্বক স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়। স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে তা গ্রহণের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে।

স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র


১। নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
২। রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
৩। ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি।
৪। নির্ধারিত ফি বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।
৫। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন।
৬। সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রকারভেদ

(১) পেশাদার হালকা (মোটরযানের ওজন ২৫০০কেজি-এর নিচে) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২১ বছর হতে হবে, (২) পেশাদার মধ্যম (মোটরযানের ওজন ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পেশাদার হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবহার কমপক্ষে ০৩ বছর হতে হবে।
(৩) পেশাদার ভারী (মোটরযানের ওজন ৬৫০০ কেজির বেশি) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পেশাদার মধ্যম ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবহার কমপক্ষে ০৩ বছর হতে হবে।

বি:দ্র: পেশাদার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য প্রার্থীকে প্রথমে হালাকা ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে। এর ন্যূনতম তিন বছর পর তিনি পেশাদার মিডিয়াম ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং মিডিয়াম ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার কমপক্ষে ০৩ (তিন) বছর পর ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়া

(ক) অপেশাদার
গ্রাহককে প্রথমে নির্ধারিত ফি (মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ৪,২১২/- টাকা এবং মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতি বছর ৫১৮/- টাকা জরিমানাসহ) জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএ’র নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র ও সংযুক্ত কাগজপত্র সঠিক পাওয়া গেলে একইদিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণ করা হয়। স্মার্ট কার্ড wপ্রন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

(খ) পেশাদার
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারীদেরকে পুনরায় একটি ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর নির্ধারিত ফি (মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ২,৪৮৭/- টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতি বছর ৫১৮/- টাকা জরিমানাসহ) জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএ’র নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণের জন্য গ্রাহককে নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে উপস্থিত হতে হবে। স্মার্ট কার্ড wপ্রন্টিং-এর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র :
১। নির্ধারিত ফরমে আবেদন;
২। রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট (পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য);
৩। ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি;
৪। নির্ধারিত ফি জমাদানের রশিদের বিআরটিএ কপি;
৫। সদ্য তোলা ০২ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি;

ডুপ্লিকেট ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া 

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
১। নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
২। জিডি কপি ও ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স।
৩। নির্ধারিত ফি বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।
৪। সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।

সবার নিরাপত্তার স্বার্থে গাড়ি চালনায় কারিগরি দক্ষতা জরুরি বিষয়। গণযোগাযোগ পরিবহনগুলোয় যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তা নির্ভর করে চালকের ওপর। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে শুধু গাড়ি চালানোই নয়, গাড়িটির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে তবেই গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামা উচিত। একটু অসাবধানতায় দুর্ঘটনার মাশুল সারা জীবন দিতে হয়। তাই সঠিকভাবে গাড়ি চালানো শিখে ড্রাইভি লাইসেন্স নেওয়া ঝামেলাহীনভাবে ও নিরাপদে গাড়ি চালানোর সেরা মাধ্যম।

Link copied!