• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজধানীর ‍‍‘জমাপানিতে ভয়‍‍’


বিজন কুমার
প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৩, ০৯:৫৯ পিএম
রাজধানীর ‍‍‘জমাপানিতে ভয়‍‍’
ছবি : সংবাদ প্রকাশ

রোববার (৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর ইন্দিরা রোড এলাকায় গিয়ে দেখা গেল জমাপানির চিত্র। এই আবদ্ধ পানি পাড়ি দিয়েই নিজ কর্মস্থলে যাচ্ছেন এখানকার মানুষ। এ সময় কথা হয় অমৃত সরকার রাজ নামে একজনের সঙ্গে।

আক্ষেপ প্রকাশ করে অমৃত সরকার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “১ ঘণ্টা টানা বৃষ্টি হলে ইন্দ্রা রোডে পানি জমে একাকার হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কয়েকদিন আগেই মিরপুরে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন জমাপানি দেখলেই ভয় লাগে। যদি একটা কিছু হয়ে যায়! এসব কেউ দেখে না। নগরবাসীর নিরাপত্তার কথা ভেবে দ্রুত এই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা জরুরি।”

এদিন ইন্দিরা রোডসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে গেছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। ম্যানহোল দিয়ে উপচে পড়ছে পানি। নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে ছোট খালে পরিণত হয়েছে। কর্মব্যস্ত মানুষদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই।

অপরদিকে, জমে যাওয়া পানিতে শুধু পথচারী নয়, ব্যবসায়ীরাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। বৃষ্টির জমে থাকা পানি দোকানে প্রবেশ করে মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।

ছবি : সংবাদ প্রকাশ

অমৃতের মতো অনেকেই আক্ষেপ প্রকাশ করছেন। তারা অভিযোগ করে বলছেন, দায়িত্বশীলদের অবহেলার কথা। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রাজধানীবাসী।

বর্ণা নামের এক নারী বলেন, “কর্মস্থলে সচরাচর হেঁটেই যাতায়াত করি। বৃষ্টি হলে রিকশা ছাড়া উপায় নেই। জমে থাকা পানি দিয়ে হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ নোংড়া পানিতে খানাখন্দ দেখা যায় না। তাছাড়া ম্যানহোল দিয়ে ময়লা পানি বের হয়। রিকশায় বাড়তি খরচ হলেও কিছু করার নেই।”

কারওয়ান বাজারের কাঠ বিক্রেতা রাজন বলেন, “এক থেকে পৌনে এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই দোকানে পানি চলে আসে। জমে থাকা পানি নেমে যেতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। তখন ক্রেতা আসতে চায় না। লোকসান গুনতে হয়। পানি জমে থাকলে জিনিসপত্র তো নষ্ট হয়। কেউ খোঁজ-খবর রাখে না।”

আতিকুর রহমান নামের আরেক কাঠ ব্যবসায়ী বলেন, "হাতিরঝিল উন্নয়ন হওয়ার পর থেকে কারওয়ান বাজারে পানি জমা শুরু হইছে। এতে আর্থিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। অনেক কাঠ নষ্ট হয়ে গেছে। বেশি পানি জমে থাকলে দ্বিগুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।"

ছবি : সংবাদ প্রকাশ

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “এই শহরের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যাওয়ার সমস্যা দীর্ঘদিনের। এই সমস্যা সমাধানে বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। আমাদের কর্পোরেশন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনাগত বিষয়গুলো বাদ দিয়ে নালা-নর্দমা নির্মাণে গুরুত্ব বেশি দিচ্ছে। কিন্তু যেসব ড্রেন রয়েছে তা প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে পূর্ণ হয়ে গেছে। এই বিষয়গুলোতে নজর দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই শহরে যে পরিমাণ ডোবা, নালা থাকা দরকার, তা উজার করে ইট,পাথর কংক্রিটে আবদ্ধ হয়ে গেছে। এই সমস্যা নিরসনে সবুজ এলাকা সংরক্ষণ করা দরকার। পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে, সকলেই যাতে নির্ধারিত স্থানে প্লাস্টিক, কাগজ, ময়লা, আবর্জনা ফেলে। আমি মনে করি, সকল অভাব কাটিয়ে, পরিকল্পিত নগরায়ণ এবং নগরবাসীকে সচেতন করা হলে এই সমস্যার সমাধান হবে।”

Link copied!