বিএনপি দেশে ‘মার্শাল ডেমোক্রেসি’ আনতে চায় কি না প্রশ্ন রেখেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, “বিএনপি যে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলছে, দেশকে তারা জিয়াউর রহমানের মার্শাল ডেমোক্রেসিতে নিয়ে যেতে চায় কি না, সেটিই হচ্ছে আমার প্রশ্ন।”
সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নবনির্বাচিত কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল সভায় সংগঠনের পক্ষে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।
হাছান বলেন, “আজকে দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, জাতিসংঘের মহাসচিব, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে সমস্ত বিশ্বনেতারা সেটির প্রশংসা করছেন। কদিন আগে বিশ্বব্যাংকের এ অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে এই সংকটময় পরিস্থিতিতেও এবং করোনাকালে বাংলাদেশ যেভাবে উন্নয়ন-অগ্রগতি করেছে, এটি অন্য দেশের জন্য উদাহরণ। যাদের জন্ম আসলে অগণতান্ত্রিকভাবে, তারা যখন রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলে, তখন মানুষ ভাবে তারা আবার মার্শাল ডেমোক্রেসিই আনতে চান।”
এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রশ্নে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। তারা আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী এবং গত পঞ্চাশ বছরে আমাদের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ঘটনাটি কোনো ঘটনাই হতো না, যদি তিনি যারা ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল, তাদের বক্তব্যটি শুনতেন বা অন্তত স্মারকলিপিটা নিতেন। সেখানে যারা তার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল, তারা তাকে হুটহাট করে গাড়িতে তুলে না নিয়ে বরং তাদের দু-চারটি কথা শোনার ব্যবস্থা করলে, এটি কোনো ঘটনাই ছিল না।”
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মন্তব্য ‘জনগণ এ সরকারকে চায় না’ এ প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, “তিনি যদি মনে করে থাকেন জনগণ এই সরকারকে চায় না, তাহলে বিএনপি নির্বাচনে আসুক, তখন বোঝা যাবে জনগণ কাদেরকে চায়! তারা তো জনগণের কাছে বহুবার আহ্বান জানিয়েছেন, সাড়া পায়নি। ১০ তারিখ তো সরকার পতন ঘটাতে চেয়েছিল, কিন্তু নিজেরাই পদত্যাগ করে চলে গেছেন।”
পুলিশের তল্লাশিতে বিএনপি নয়াপল্টন অফিসের প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে এমন মন্তব্যের বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি শুরু থেকেই তাদের অফিসে পুলিশ তল্লাশি নিয়ে অতিরঞ্জিত বক্তব্য রাখছে। প্রথম দিন পুলিশ সেখানে তল্লাশি করে তাজা বোমা পেয়েছে। যে অফিসে তাজা বোমা পাওয়া যায়, সেখানে তন্ন তন্ন করে তল্লাশি হবে, এটি খুবই স্বাভাবিক। সেখানে শুধু তাজা বোমা নয়, নগদ টাকা, লাঠিসোঁটা, ১৬০ বস্তা চাল, আড়াই লাখ বোতলজাত পানিসহ আরও অনেক কিছু পাওয়া গেছে, যেগুলো স্বাভাবিক নয়। পুলিশ তল্লাশির স্বার্থে তল্লাশি করেছে। বিএনপি যে অভিযোগগুলো করছে সেগুলো সঠিক নয়।”
অতীত স্মরণ করিয়ে দিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন আমাদের ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ অফিসে বহুবার পুলিশ গিয়ে তছনছ, তল্লাশি করেছে এবং অফিস থেকে অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। এগুলো বিএনপির হয়তো মনে নেই। তাই ড. খন্দকার মোশাররফ সাহেবকে আমি সবিনয়ে অনুরোধ জানাব, একটু পেছনে ফিরে তাকানোর জন্য।”
এর আগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি গণমাধ্যমের সঙ্গে ছিলাম, আছি ও থাকব। ডিআরইউতে গত ২৭ বছরে রাজনৈতিক বিভাজন হয়নি। আমি আশা করব, ভবিষ্যতেও হবে না। করোনাকালসহ সবসময় আপনাদের কর্মসূচিগুলো সাংবাদিকদের কল্যাণে ভূমিকা রেখেছে। ডিআরইউ আয়োজিত প্রশিক্ষণে প্রেস ইনস্টিটিউট সহায়তা দিয়ে থাকে এবং তা আরও বাড়বে। তবে আপনাদের আর্থিক বরাদ্দের দাবির প্রেক্ষিতে জানাচ্ছি যে, মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের কোনো খাতই নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সব মানুষের জন্য এবং বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এ আইন রয়েছে। সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলব।”
ডিআরইউর অপর নেতাদের মধ্যে সহসভাপতি দীপু সারোয়ার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈনুল আহসান, অর্থ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক কাওসার আজম, নারী বিষয়ক সম্পাদক মরিয়ম মনি সেঁজুতি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামাল উদ্দিন সুমন, তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান, আপ্যায়ন সম্পাদক মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন, কল্যাণ সম্পাদক মো. তানভীর আহমেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য মনিরুল ইসলাম মিল্লাত, ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, মহসিন বেপারী, মোজাম্মেল হক তুহিন, কিরণ সেখ, এস এম মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ও মো. ইব্রাহিম আলী সভায় যোগ দেন।
তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ১৩ বিদেশি সাংবাদিকের সাক্ষাৎ
এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকার ১১টি দেশ থেকে বাংলাদেশ সফররত ১৩ জন সাংবাদিক সোমবার বিকেলে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সচিবালয়ে এ সাক্ষাৎকালে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক আহমেদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাবলিক ডিপ্লোমেসি উইংয়ের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী তাদের কাছে গণমাধ্যম খাতসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন তুলে ধরেন ও বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে আলজেরিয়া, বাহরাইন, বুলগেরিয়া, কম্বোডিয়া, হংকং, ওমান, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্পেন, ভিয়েতনাম থেকে আগত সাংবাদিকরা ১৫ থেকে ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফরের অংশ হিসেবে শীর্ষ দর্শনীয় স্থান ও কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন।