• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মুহররম ১৪৪৬

শৃঙ্খলাভঙ্গকারীরা ‘ক্ষমায়’ ফিরছেন আওয়ামী লীগে


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২৩, ০৮:৫২ এএম
শৃঙ্খলাভঙ্গকারীরা ‘ক্ষমায়’ ফিরছেন আওয়ামী লীগে

সফিকুল ইসলাম  : আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গকারী ও অতিকথনে দলকে বিপাকে ফেলা নেতাকর্মীদের ক্ষমার মধ্য দিয়ে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে আওয়ামী লীগে। তবে এখনই তাদের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ কিংবা দলের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

দল বা সংগঠনে থেকে দলের বিরুদ্ধে নির্বাচন করা, দলের সাথে নানা রকম প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা এবং দলীয় নিয়মনীতি ভঙ্গসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে দল থেকে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এর মধ্যে গত কাউন্সিলের মিটিংয়ে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন, ছোটখাটো অপরাধ করেছিলেন, তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। সাধারণ ক্ষমার আওতায় প্রথম সাধারণ ক্ষমার পুরষ্কার পেয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম। তবে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃতদের এই তালিকা বেশ দীর্ঘ। বাকিদের ক্ষেত্রে কী হতে পারে? এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে মেয়র জাহাঙ্গীর যদি সাধারণ ক্ষমা পেতে পারেন, তবে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত অন্যান্য নেতাদের ক্ষেত্রে কী হবে? তারা কি সবাই ক্ষমা পাবেন?

এছাড়া দলের নিয়ম ভঙ্গ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পৌরসভা নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন, এমনি সংসদ নির্বাচনও করেছিল অনেকেই। এতে দলের সংবিধান অনুযায়ী বহিষ্কৃত হন এসব নেতা। এদের মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ঢাকা-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আওলাদ হোসেন অন্যতম।

বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন না করলেও দলের নিয়ম-নীতি ভঙ্গসহ বিভিন্ন কারণে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন অনেকেই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী এবং জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ড. মুরাদ হাসান। রয়েছেন রাজশাহীর পবা পৌরসভার আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক এবং কাটাখালি পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্বাস আলী। রয়েছেন আরও অনেকেই।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে প্রার্থী হওয়ায় ঢাকা-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আওলাদ হোসেনকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরীর সংসদীয় ঢাকা-৪ আসনের অন্তর্গত থানা, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের যে সকল নেতাকর্মীরা ড. আওলাদ হোসেনকে সহযোগিতা করছেন, তাদের কোনো প্রকার সহযোগিতা না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। এই নির্দেশ উপেক্ষা করে যদি কোনো নেতাকর্মী ড. আওলাদ হোসেনকে সহযোগিতা করেন তাদের বিরুদ্ধেও অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দলীয় সূত্র মতে, বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন না করলেও দলের নিয়ম-নীতি ভঙ্গসহ বিভিন্ন কারণে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ও জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ড. মুরাদ হাসান। নানা বিষয়ে বিতর্কিত কথা বলে আলোচনা ও সমালোচনার শীর্ষে আসেন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান। সবশেষ এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে তার আপত্তিকর ফোনালাপ ফাঁস হয়। মুহূর্তের মধ্যেই ফাঁস হওয়া ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে ডা. মুরাদ হাসানকে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে বাধ্য হয়েই অব্যাহতি নিতে হয়। পরে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বসানোয় আপত্তি তোলা, কটূক্তি ও বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ায় রাজশাহীর পবা পৌরসভার আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে এবং কাটাখালি পৌরসভার মেয়র থেকে আব্বাস আলীকে বহিষ্কার করা হয়। রাজশাহীর কাটাখালি পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী একটি ঘরোয়া বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ-সংক্রান্ত তার একটি অডিও কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তাকে রাজশাহীর পবা পৌরসভার আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ এবং কাটাখালি পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

আওয়ামী লীগের সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ এবং কথা বলার কারণে আওয়ামী লীগ থেকে অনেক নেতাই বহিষ্কৃত হয়েছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ সাধারণ ক্ষমার আওতায় এসেছেন। তবে সবাইকে ক্ষমা করা হবে, ঠিক তা নয়। অপরাধ বিবেচনায় ছোটখাটো অপরাধ যারা করেছেন, ইতিমধ্যেই তারা সাধারণ ক্ষমা পাচ্ছেন। অপরাধ বিবেচনায় কেউ কেউ ক্ষমা পেতে পারেন। উপজেলা এবং পৌরসভা পর্যায়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের অনেককেই সাধারণ ক্ষমার আওতায় এনে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের পুনরায় সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আগে অনুষ্ঠিত জাতীয় কমিটির সভায় সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে অব্যাহতিপ্রাপ্তদের ক্ষমা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক দলের সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ব্যক্তিগতভাবে জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। জাহাঙ্গীর আলমের চিঠিটি গত ১ জানুয়ারি ইস্যু করা হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মেয়র জাহাঙ্গীর যে ধরনের দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করেছেন, এমন অপরাধ করে অনেকেই আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। যেহেতু মেয়র জাহাঙ্গীর সাধারণ ক্ষমার আওতায় এসেছেন, সেহেতু অন্যান্যদের ক্ষেত্রেও এই সাধারণ ক্ষমা আশা করা যেতেই পারে। তবে লঘু দণ্ড এবং গুরু দণ্ড বিবেচনায় এ ক্ষমা হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই সাধারণ ক্ষমার আওতায় কারা আসছেন? কে কে সাধারণ ক্ষমা পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে পুরস্কৃত হচ্ছেন?

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “জাতীয় কমিটি দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী, দলীয় কোন্দল সৃষ্টিকারী শতাধিক আবেদন গ্রহণ করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমা করেছেন। জাতীয় কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে ক্ষমা করেছে। এর বাইরে কেউ থাকলে তারাও আবেদন করতে পারবে।”

Link copied!