সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সহজেই শাস্তি, এমনকি চাকরি থেকে বরখাস্তের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
এর ফলে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী ছুটি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে এবং কোনো সভা-সমাবেশে যোগ দিলে সরকার চাইলে বরখাস্তসহ শাস্তি দিতে পারবে।
আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং (আইনি মতামত) নেওয়া সাপেক্ষে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে খসড়াটি অনুমোদনের কথা জানানো হয়। তবে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ায় কী আছে, তা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়নি।
অবশ্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপনের আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যে খসড়া তৈরি করেছিল, তাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়। সেগুলো হলো—এমন কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন, যার কারণে অন্য যে কোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে; অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন; অন্য যে কোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন এবং যে কোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন। খসড়ায় এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে বলা হয়েছিল, দোষী কর্মচারীকে নিম্ন পদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ, চাকরি থেকে অপসারণ বা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দণ্ড দেওয়া যাবে।
মূলত সাড়ে চার দশক আগের বিধানের কিছু কিছু বিষয় এদিক-ওদিক করে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর সংশোধন করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নে নির্দেশনা
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ উপস্থাপিত সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশগুলো বাস্তবায়নযোগ্য কি না, বাস্তবায়নযোগ্য হলে বাস্তবায়নের সম্ভাব্য সময়সীমা এবং বাস্তবায়নের প্রভাব বা সংশ্লেষের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ দফাওয়ারি মতামত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করবে।
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন
বৃহস্পতিবারের সভায় ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়াও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, এ ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘দ্য প্রোটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ -এর খসড়া, বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস সরকারের মধ্যে নৌ-প্রতিরক্ষাসামগ্রী সংক্রান্ত সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, মত্স্য সুরক্ষা এবং সংরক্ষণ বিষয়ক একটি অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।