প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, শেখ হাসিনার বক্তব্যের বিষয়ে এখনই রাজনৈতিক দলগুলোকে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনকারীদের ‘টেরোরিস্ট’ আখ্যা দিয়ে গোটা জাতিকেই হুমকির মুখে ফেলছেন।
শনিবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত ‘জনতার ইশতেহার’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, “আজও দেখুন, তিনি (শেখ হাসিনা) বলছেন—‘যারা জুলাইয়ের আন্দোলন করেছে, তারা সবাই টেরোরিস্ট’। কত ভয়াবহ কথা! সাইফুল ভাই আন্দোলনে ছিলেন, টেরোরিস্ট; আমির খসরু ভাই আন্দোলনে ছিলেন, তিনিও টেরোরিস্ট; আমরা যারা লিখেছি, তারাও টেরোরিস্ট। ১৮ কোটি মানুষকে টেরোরিস্ট বলে তিনি ক্ষমতায় ফিরতে চান। কাউকে টেরোরিস্ট বলা মানে তাকে হত্যার যোগ্য করা। এই মানসিকতা গোটা জাতির জন্য অস্তিত্বের হুমকি।”
প্রেস সচিব বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অনুষ্ঠিত হবে।
“কেউ কেউ বলছেন জুলাই সনদ নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। আসলে এমন বিতর্ক অনেক দেশে ১০-১৫ বছর ধরে চলে। সবাই যদি একমত হতো, তাহলে দেশে একদলীয় শাসন হতো। মতপার্থক্য থেকেই ঐকমত্য জন্ম নেয়। যদি রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে,”—বলেন তিনি।
শফিকুল আলম বলেন, কিছু থিংকট্যাংক দাবি করছে, জুলাই সনদ নিয়ে শ্রমিক, কৃষক বা নারীদের মতামত নেওয়া হয়নি।
“যেসব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসেছে, তারা কি এই শ্রেণিগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে না? তাদের নারী উইং, শ্রমিক উইং, কৃষক সংগঠন তো আছে! আসলে কিছু থিংকট্যাংক নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতেই এসব মুখরোচক কথা বলছেন,” বলেন তিনি।
তিনি আরও যোগ করেন, “জুলাই সনদে শাসনতান্ত্রিক কাঠামোসহ প্রায় সব বিষয়ই এসেছে। ৯ মাসে সব ঠিক করে ফেলা সম্ভব নয়।”
প্রেস সচিব জানান, নির্বাচনের পর নতুন সংলাপের মাধ্যমে আরও উন্নত শাসনতন্ত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
“নেপালেও বিপ্লবের পর সংবিধান করতে ৯ বছর লেগেছে। আমরা একদিনে সেটা পাব না। তবে আমাদের জনগণ এখন জবাবদিহিমূলক, দুর্নীতিমুক্ত এক শাসনব্যবস্থা চায়,”—বলেন তিনি।
চাকরির বাজার ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে শফিকুল আলম বলেন, “জুলাইয়ের আন্দোলন কর্মসংস্থান নিয়েই শুরু হয়েছিল। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চাকরি কেড়ে নিচ্ছে—এর মধ্যে লাখ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।”
তিনি অবকাঠামোগত বিনিয়োগের দিকেও নজর দেওয়ার আহ্বান জানান।
“গোপালগঞ্জ-কাশিয়ানী রেললাইন বা খুলনা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে গ্রোথ এরিয়া নয়। আসল উন্নয়ন করিডোর হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম। অথচ সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে আমরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অবকাঠামো বানাচ্ছি,”—বলেন তিনি।
শেষে প্রেস সচিব বলেন, “আমরা এমন এক রাজনৈতিক সমঝোতা চাই, যেখানে ডান বা বাম—সবাই গণতন্ত্রে বিশ্বাস রাখবে। এটি না হলে বিদেশে ভুল বার্তা যাবে, বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থানও বাড়বে না।”
































