চিরদিনের শ্যামল মিত্র!


আরাফাত শান্ত
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩, ০১:৩৩ পিএম
চিরদিনের শ্যামল মিত্র!

বাংলা গানের ভুবনে চিরকাল সবুজ আর শ্যামল একজনই, তিনি শ্যামল মিত্র। তার নামের মতোই মিষ্টি সব গান ওনার তৈরি। গেয়েছেন, সুর করেছেন। বাংলা গানের যে লোকজ ভান্ডার, তার সার্থক অ্যাডপটেশন তার সুরগুলোতে। তিনি নাকি মাত্র পাঁচ-সাত মিনিটে হারমোনিয়াম বাজিয়ে সুর করতে পারতেন। কিন্তু  পরে ভুলে যেতেন, এই সমস্যার সমাধান হলো তিনি একজন তবলচী সঙ্গে রাখতেন, যে শুধু তার করা সুর মনে রাখত। রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন ভালো, কিন্তু ওনার বাবা চাইতেন চিকিৎসক হোক, উনি শিল্পী ও সুরকার হয়েছেন। তার বাবা-মা কেউই এ কাজের পক্ষে ছিলেন না। যখন দেখলেন সবাই তাদের সন্তানকে চিনে, অবাক হয়ে ভাবতেন এত মানুষ ওর গান শোনে।

নৈহাটিতে তার জন্ম। কলেজে শো করতে গিয়েছিলেন সতীনাথ। সতীনাথ খাঁটি জহুরীর মতো চিনলেন টেবিল চাপড়ে গান গাওয়া শ্যামলকে। বললেন গান গাইতে হলে কলকাতায় থাকতে হবে। সুধীরলালের যোগ্য ছাত্র হলেন। সারা জীবন তিনি ওনার শেখানো বিদ্যাটাই মেনে চলেছেন। আর মেন্টর তো ছিলই সতীনাথ। ৪৬টা সিনেমায় গান সুর করেছেন, আর আধুনিক গান করেছেন সব সময়। আমুদে, আড্ডাবাজ মানুষ ছিলেন। পাড়া-প্রতিবেদেীরও বুঝতেও দিতেন না তিনি কত খ্যাতিমান। বাচ্চাদের সঙ্গেও চুটিয়ে আড্ডা মারতেন আর গান শোনাতেন। ‍‍`‘দেয়া নেয়া’ ছবিটার কথাই ধরুন, কী গানগুলো সব, আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারা দিন, গানে ভুবন ভরিয়ে দেব, মাধবী মধুপেয় হলো মিতালী। কিংবা ‘কিপ ইট সিম্পল’ সূত্রে গান, ‘আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে’। আনন্দ আশ্রম, অমানুষ এসব ছবির গানও শ্যামল মিত্রের করা। বাংলাদেশকে তিনি ভালোবাসতেন, বাংলার হিন্দু বাংলার বৌদ্ধ বলে যে গানটা আছে, সেটাও ওনার করা। আলমগীর কবীরের সিনেমাতেও গান সুর ও সংগীত আয়োজন করেছেন।

আশা ভোঁসলে বলেছিলেন, দেশসেরা সুরকার অনেকেই আছেন, কিন্তু তাঁর মতো স্পোন্টেনিয়াস এক সুরকার, মুহূর্তেই সুর মাথায় আনতে পারতেন। শ্যামল মিত্র খুব চায়নিজ খেতে ভালোবাসতেন। কিশোর কুমার বলেছিল, ‘আপনি তো বাচ্চাদের মতো চায়নিজ খান। একগাল হেসে শ্যামল মিত্র নাকি বলেছিল, তুমি তো তোমার নামের মতো কিশোর থাকতে পারলে না, আমি না হয় হলাম কিশোর।’ যত দিন বাংলা গান থাকবে তত দিন শ্যামল মিত্র কিশোর হয়েই আমাদের মাঝে থাকবেন। আজ ১৪ জানুয়ারি তাঁর জন্মদিন। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ।

লেখক : আরাফাত শান্ত
 

Link copied!