ওসমানী উদ্যান, আড়িয়াল বিল বা লালন ফকিরের আখড়া রক্ষাসহ সামাজিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। সরব থেকেছেন মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য হওয়া যেকোনো আন্দোলনে। আজ সেই পুরোধা ব্যক্তিত্ব ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর জন্মদিন।
১৯৩৬ সালের এই দিনে মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরের বাড়ৈখালীতে জন্মগ্রহণ করেন মার্কসবাদী চিন্তা-চেতনায় উদ্বুদ্ধ এই লেখক। তাঁর বাবার নাম হাফিজ উদ্দিন চৌধুরী ও মা আসিয়া খাতুন। জন্ম মুন্সিগঞ্জে হলেও বাবার চাকরিসূত্রে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর শৈশব কেটেছে রাজশাহী ও কলকাতাতে। সেখানেই শিক্ষাজীবনের শুরু। এরপর স্কুলের গণ্ডি পার করেন ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে। নটরডেম কলেজ থেকে পাস করেন ইন্টারমিডিয়েট। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
স্নাতক পাসের পর ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে উচ্চতর গবেষণার জন্য সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। সেখানে লীডস বিশ্ববিদ্যালয় এবং লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন ১৯৬৮ সালে। তারপর ফিরে আসেনে দেশে। ১৯৫৭ সালে অধ্যাপনা শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থাকাকালে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দুইবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার জন্য সিনেট কর্তৃক মনোনীত হন। কিন্ত তিনি সেই মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেওয়ার পর এই গবেষক অধ্যাপক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে যোগ দেন।
কর্মজীবনে অধ্যাপনা ছাড়াও সাংবাদিকতা ও লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন প্রতিবাদী এই লেখক। তিনি নতুন দিগন্ত পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। আশির দশকে ‘গাছপাথর’ ছদ্মনামে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় নানা বিষয়ে লেখালেখি করেন। এছাড়া ‘পরিক্রমা’, ‘সাহিত্যপত্র’, ‘সচিত্র সময়’, ‘সাপ্তাহিক সময়’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা’, ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টাডিস’ পত্রিকায়ও সম্পাদনা করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তার লেখা বইয়ের সংখ্যাও শতাধিক। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য বই হলো- ‘বঙ্কিমচন্দ্রের জমিদার ও কৃষক’, ‘বাঙালির জাতীয়তাবাদ’, ‘জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি : ১৯০৫-৪৭’, ‘দুই যাত্রায় এক যাত্রী’। শিক্ষায় অবদান রাখার জন্য ১৯৯৬ সালে একুশে পদক পান এই ইমেরিটাস সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। এছাড়া বাংলা একাডেমি পুরষ্কারসহ অনেক সম্মাননা ও পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
সাম্যবাদী রাজনৈতিক দর্শন ও সমাজ বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তার কথা বারবার উঠে এসেছে এই চিন্তাবিদের লেখায়। বর্তমানে তিনি ‘সমাজতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবী সংঘে’র আহ্বায়ক।