চিংড়ি ও ইলিশের চাহিদা যুগ যুগ ধরেই চলছে। এ যেন এক মধুর লড়াই। এ বলে আমায় দ্যাখ ও বলে আমায়। স্বাদে গন্ধে রূপে বর্ণে তো প্রতিযোগিতা আছেই, গুণেও কেউ কারও থেকে কম নয়। ইলিশ চিংড়ির গুণাগুণ নিয়ে চুলচেরা বিচারও করেন ডায়েটিশিয়ানরা।বাঙালি রেসিপি মানেই একটি আবেগ থাকবেই। আজ জেনে নিই চলুন চিংড়ি ও ইলিশের পুষ্টিগুণ। যে মাছ দুটি এভাবে আমাদের রসনাতৃপ্তি দিয়ে চলেছে তারা পুষ্টিগতভাবে কতটা সমৃদ্ধ?
মাছের রাজা ইলিশ আমাদের রুপালি ইলিশ একটু বেশিই উপকারী।
পুষ্টিগুণ
১০০ গ্রামে প্রোটিন ও ফ্যাট রয়েছে যথাক্রমে ২২ ও ১৯.৫ গ্রাম। এর স্বাদ লুকিয়ে থাকে এর ফ্যাটি এসিডের উপস্থিতির ওপর। ওলেইক, লিনলেইক, স্টিয়ারিক, আরাচিদনিক এসিড রয়েছে। যথেষ্ট পরিমাণে পুফার উপস্থিতির কারণে করোনারি আর্টারি ডিসিজ, স্ট্রোক, হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিস ও ডিপ্রেশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বেশ উপযোগী। ইলিশের শরীরে প্রচুর ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডের উপস্থিতি মস্তিষ্কে গ্রে ম্যাটার বৃদ্ধি করে ডিমেনশিয়া বিলম্বিত করে, অস্টিও অর্থ্রাইটিসের প্রকোপ কমায়, প্রস্টেট ও ব্রেস্ট ক্যানসারের জন্য দায়ী কোষগুলোর মৃত্যু ত্বরান্বিত করে। রক্তে ভালো ফ্যাট HDL-এর পরিমাণ বাড়ায় ও খারাপ ফ্যাট LDL-এর পরিমাণ কমাতেও সাহায্য করে। ইলিশে খনিজ লবণের উপস্থিতি হলো এর সর্বোচ্চ উপকারিতা। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, জিঙ্ক, আয়রন, কপার ও ক্যালসিয়ামের মতো উপাদান। আমাদের দেহের এনজাইমগুলোর সাথে মিশে এগুলো দেহের স্বাভাবিক মেটাবলিজম প্রক্রিয়া বজায় রাখে।
যারা খাবেন না
যাদের কিডনির সমস্যা ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুব বেশি তারা ইলিশ মাছ এড়িয়ে চলুন। তবে সব জায়গায় ইলিশের পুষ্টিগুণ সমান নয়। এই মাছের দেহের বিভিন্ন অংশেও পুষ্টিগুণ আলাদা আলাদা হয়।
গুণী চিংড়ি
বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে চিংড়িও। অন্য সব আমিষ জাতীয় খাবারের সঙ্গেও টক্কর দিতে পারে চিংড়ি। এতে প্রোটিন প্রায় ৫৮—৬২%। ফ্যাটের পরিমাণও মাছ-মাংসের তুলনায় কম, মাত্র ৪—৬%। রক্তে যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি তারা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে তবেই চিংড়ি খান। চিংড়ি সর্বদা রান্না করুন আনস্যাচুরেটেড তেলে, যেমন সয়াবিন বা সানফ্লাওয়ার তেলে। তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও চিংড়ির শরীরে ধাতব পদর্থগুলোর উপস্থিতি, যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, ও লোহার উপস্থিতি একে পুষ্টিগুণের দিক থেকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। চিংড়িতে রয়েছে সেলেনিয়ামও, যা ইমিউনিটি থাইরয়েড ও রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ ভালো রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ, ডি, ই, বি১, বি২, বি৩ নার্ভাস সিস্টেম ভালো রাখে, ক্যালসিয়াম ও আয়রন ব্লাড ফরমেশন ও ক্লটিং-এর জন্য বিশেষ দরকার।
যারা খাবেন না
চিংড়িতে বেশ কয়েকটা এলার্জিক যৌগ, যেমন ট্রোপোমায়সিন, আর্জিনিন কাইনেজ ইত্যাদি, আমাদের দেহে বিভিন্ন রকম সমস্যা তৈরি করতে পারে, ত্বকের প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট, চোখের সমস্যা ইত্যাদি। এর মারাত্মক আকার দেখা যায় অনাফেলাইটিক শক হিসেবে, যা অত্যন্ত সঙ্কটজনক পরিস্থিতি তৈরি করে। তবে এটি খুবই কম ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। তাই ইলিশের তেল-ঝাল হোক বা চিংড়ির মালাইকারি, পাতে থাকতেই পারে, তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, ডিসলিপিডমিয়া ইত্যাদির সমস্যা থাকলে অবশ্যই পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে তবেই খান। দেখবেন পেট ও মন দুইই ভালো থাকবে।