• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ইঁদুরের ভ্রূণ মানুষের ডিম্বাণুতে প্রবেশ করিয়ে মানব জিনের পরিবর্তন ঘটাতে চান বিজ্ঞানী


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৩, ০৪:৫২ পিএম
ইঁদুরের ভ্রূণ মানুষের ডিম্বাণুতে প্রবেশ করিয়ে মানব জিনের পরিবর্তন ঘটাতে চান বিজ্ঞানী

২০১৯ সালে মানব জিন নিয়ে পরীক্ষার জন্য গ্রেপ্তার হয়েছিলেন চীনের বিজ্ঞানী শে জিয়ানকুই। সম্প্রতি তিনি মুক্ত হয়েছেন। এবার তিনি ইঁদুরের ভ্রূণ এবং মানুষের নিষিক্ত ডিম্বকোষ বা ‘জাইগোট’গুলোর মিউটেশন (একত্রিত) ঘটিয়ে মানব জিনের পরিবর্তন ঘটাতে চান। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ চীনেরই বিজ্ঞানীরা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, গত ২৮ জুন এই প্রস্তাব দিয়েছেন জিয়ানকুই। যা চীনের অন্য বিজ্ঞানীদের সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, জিয়ানকুইয়ের এই পরীক্ষা পরের প্রজন্মের মানব ডিএনএ-র গঠন চিরতরে নষ্ট করে দিতে পারে।

জিয়ানকুইয়ের ধারণা, এই মিউটেশনের ফলে অ্যালঝাইমার (স্মৃতিভ্রমজনিত রোগ। সাধারণত বৃদ্ধ বয়সে দেখা যায়) রোগ থেকে  পুরোপুরিভাবে মুক্তি পেতে পারে মানবজাতি। আর সেই কারণেই তিনি এই গবেষণা করতে চান বলে জানিয়েছেন।

বিজ্ঞানীদের মতে, এই পরীক্ষায় এক ধরনের অস্বাভাবিক নিষিক্ত ডিম্বাণু ব্যবহার করা হবে। যা সাধারণত এক জন নারীর শরীরের জন্য উপযুক্ত নয়।

জিয়ানকুই চিনের শেনজেনে ‘সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’তে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। ২০১৮ সালে খবরের শিরোনাম আসেন জিয়ানকুই।

সেসময় এইডস মুক্ত রাখতে তিনি দুই যমজ নাবালিকা বোনের জিন পরিবর্তন করতে উদ্যত হয়েছিলেন। এই দুই যমজ বোন লুলু এবং নানা ২০১৮ সালে জন্মগ্রহণ করে। জিয়ানকুই তাদের জিন পরিবর্তন করে সিসিআর৫ নামে একটি জিন লক্ষ করেন। যা তার মতে এইচআইভি থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম।

অন্যদিকে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, জিয়ানকুই যাদের শরীরে জিনের মিউটেশন ঘটিয়েছেন, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই অল্প বয়সে মারা গিয়েছেন। জিয়ানকুইয়ের কাজকে অন্য বিজ্ঞানীরা ‘বোকামি’ এবং ‘বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দেন।

এই পরীক্ষার জন্য দুই সহকারীসহ জিয়ানকুইকে চিনের একটি আদালত দোষী সাব্যস্ত করে। শাস্তি হিসেবে জিয়ানকুইকে তিন বছরের জন্য জেলে পাঠানো হয়েছিল। ১০ লক্ষ ইউয়ান জরিমানাও করা হয় তাকে।

জিয়ানকুইয়ের নতুন গবেষণা প্রসঙ্গে সিঙ্গাপুরের নানয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক পিটার ড্রোজে বলেন, “পুরো বিষয়টা উন্মাদের কাজ ছাড়া আর কিছু না। জিয়ানকুই মূলত মানবদেহে জিনের পরিবর্তন ঘটাতে চান। অ্যালঝাইমার ঠেকাতে জিয়ানকুইয়ের এই গবেষণা। আগেও উনি এসব পরীক্ষা করতে গিয়ে জেলে গিয়েছেন। আমি অবাক হচ্ছি যে উনি আবার একই বিষয়ে গবেষণা করতে চাইছেন।”

চীন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বেশ কয়েকটি দেশে মানবদেহের জিন পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ। জিনগত কোনো পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়লেও তা মানবশরীরে করার অনুমতি নেই।

চীনের আইন গবেষণার জন্য জিনে পরিবর্তন করা ভ্রূণ নারীদের মধ্যে স্থাপন করার অনুমতি দেয় না। প্রজননের জন্য পরিবর্তিত জিনের ব্যবহার সে দেশে দীর্ঘ দিন ধরে নিষিদ্ধ। জিয়ানকুইয়ের প্রস্তাব এমন সময়ে এসেছে যখন আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ কোভিডকে চীনের ‘ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করেছে।

দাবি করা হয়েছে, কোভিড ভাইরাসের জিন পরিবর্তন করে তা মানব সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর সেই কারণেই চীনের দিকে আবারও এমন কোনো অভিযোগ উঠুক, তা বেইজিং চাইছে না।

Link copied!