• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
সঙ্কটে জিনপিং

নির্মাণশিল্পে বিনিয়োগ : বড় ঝুঁকিতে চীনের অর্থনীতি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৩, ০৫:১৬ পিএম
নির্মাণশিল্পে বিনিয়োগ : বড় ঝুঁকিতে চীনের অর্থনীতি
চীনের একটি অঞ্চলে নির্মিত বহুতল ভবন। ফাইল ছবি

চীন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। গত কয়েক মাস ধরে দেশটির অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা। জিনপিংয়ের দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট হলে এর প্রভাব পড়তে পারে পৃথিবীর অন্য অনেক দেশেও। কারণ চীনের সঙ্গে অনেক দেশের রয়েছে নানা বিষয়ে লেনদেনের সম্পর্ক। সম্প্রতি দেশটিতে দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক সঙ্কট। একইসঙ্গে রয়েছে ভূরাজনৈতিক নানা ঝামেলাও।

জানা যায়, চীনের অর্থনৈতিক সঙ্কটের সঙ্গে জুড়ে আছে তাদের নির্মাণসঙ্কট। দেশটির বড় ভরসার জায়গা ছিল এই নির্মাণশিল্প। গত কয়েক মাসে সেই খাতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বেইজিং।

সমস্যার সূত্রপাত সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল থেকেই। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী জিনপিং যে নীতি নিয়েছিলেন, সেখানেই গোড়ায় গলদ রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত।

যে কোনও দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার চাবিকাঠি লুকিয়ে থাকে সে দেশের বাজারের সক্রিয়তার ওপর। সাধারণ মানুষ যত কেনাকাটা করবেন, বাজারে যত লেনদেন হয়, তত মুদ্রাস্ফীতি কমে।

এই মুদ্রাস্ফীতি রোধ নিশ্চিত করতে চীন সরকার নির্মাণশিল্পে বিনিয়োগ করেছিল। সাধারণ মানুষের হাতে কাঁচা টাকা তুলে দিতে দেশজুড়ে শুরু হয়েছিল নির্মাণের মহাযজ্ঞ।

সারি সারি বহুতল ভবন নির্মাণ করেছিল চীন। রাজপথ থেকে অলিগলিতেও শুরু হয়েছিল নির্মাণকাজ। বড় বড় আবাসন, বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। সবটা পরিকল্পনামাফিক এগোয়নি।

চীন সরকারের পরিকল্পনা ছিল, নির্মাণকাজে সাধারণ শ্রমিকদের নিয়োগ করে পরিশ্রমের বিনিময়ে তাদের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার। সেই টাকা লেনদেনের মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠবে বাজার। মুদ্রাস্ফীতি ঠেকানো যাবে।

কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বাড়িঘর বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এত নতুন বহুতল তৈরি হয়েছে যে, সেখানে থাকার লোক নেই! সাধারণ মানুষ গাঁটের টাকা খরচ করে সেখানে থাকার কথা ভাবছেনই না।

চীনের মানুষের একটা বড় অংশের মধ্যে সম্প্রতি সরকারের প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে বলে লক্ষ্য করা গেছে। করোনা মহামারির পর থেকেই চীনা নাগরিকেরা হয়ে উঠেছেন অতি সচেতন এবং সঞ্চয়ী।

রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন চীনারা। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারত্বের হার। যে কারণে নতুন করে বিয়ে, সংসার, সন্তানের পরিকল্পনাও ত্যাগ করেছেন অনেকে।

একইভাবে, নতুন বাড়ি কিনতে চাইছেন না চীনারা। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা না থাকায় মোটা টাকা খরচে  এগিয়ে আসছেন না কেউই। তাই মার খাচ্ছে জিনপিংয়ের নির্মাণশিল্প।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, চীন সরকার নিজেদের তৈরি বহুতল ভবন নিজেরাই ভাঙতে বাধ্য হচ্ছে। ফাঁকা পড়ে আছে সেসব বাড়ি। ধসে গিয়েছে নির্মাণশিল্পের মতো অর্থনীতির শক্ত ঘাঁটি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঙ্কটময় এই পরিস্থিতি থেকে খুব শীঘ্রই মুক্তি পাওয়ার আশা নেই। বরং, আরও খারাপ দিন জিনপিংয়ের জন্য অপেক্ষা করে আছে। ব্লুমবার্গ নিউজের একটি সমীক্ষায় প্রতি ১৫ জন চীনার মধ্যে অন্তত ৯ জনের দাবি, ২০২৩ সালের শেষ দিকে চীনের অর্থনীতিতে আরও বড় সঙ্কট অপেক্ষা করছে। এই ৯ জনের মধ্যে ৬ জন আবার এর জন্য দায়ী করেছেন নির্মাণশিল্পকে। এর পরে রয়েছে ভূ-রাজনীতিগত সমস্যা।

নির্মাণশিল্পের এই করুণ দশা চীনের শেয়ার বাজারেও প্রভাব ফেলেছে। নির্মাণ সংস্থাগুলির শেয়ার হু হু করে পড়ে যাচ্ছে। গত ১২ বছরে এই পরিস্থিতি দেখা যায়নি। নির্মাণসঙ্কট না মেটাতে পারলে শেয়ার বাজারের উন্নতি হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

এর মাঝে চীনের বড় বড় নির্মাণ সংস্থা আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে আছে। চীন এভারগ্রান্ডে গ্রুপ দেশটির অন্যতম এবং বড় রিয়েল এস্টেট গোষ্ঠী। তারা ঋণগ্রস্ত। এই গ্রুপের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বড়সড় অপরাধে জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।

চীনের আরও একটি বড় নির্মাণ সংস্থা কান্ট্রি গার্ডেন হোল্ডিংস। সেই সংস্থাও বর্তমানে দেউলিয়া হতে বসেছে। আদালতে লড়াই চালাচ্ছেন সংস্থার কর্তৃপক্ষ। নির্মাণশিল্পের এই দুর্দশা কাটাতে না পারলে আগামী দিনে জিনপিংকে আরও ভুগতে হবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র-আনন্দবাজার পত্রিকা। 

Link copied!