• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

পাকিস্তানের ছকে স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র ‘খালিস্তান’ চক্রান্তে অমৃতপাল


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৩, ১০:১৪ এএম
পাকিস্তানের ছকে স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র ‘খালিস্তান’ চক্রান্তে অমৃতপাল

ভারত থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র ‘খালিস্তানের’ দাবিতে আন্দোলন করে আসছে ভারতের পাঞ্জাবের অন্যতম নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী শিখ সম্প্রদায়। ৮০ দশকের দিকে সেই আন্দোলন দমনে ভারত সরকার হাজার হাজার শিখ বিদ্রোহীকে হত্যা করেছিল। তাদের সেই আন্দোলন সেখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। এরপর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ সময়। শিখদের পৃথক মাতৃভূমির স্বপ্নকে পুনরায় পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন খালিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিং।

অমৃতপাল সিং বারবার প্রকাশ্যেই বলেছেন তিনি খালিস্তানপন্থী নেতা ‘জার্নেল সিংহ ভিন্দ্রানওয়াল’ কাছে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, নিহত ‘গুরুর’ মতোই পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাঞ্জাবজুড়ে অশান্তি বাধানোর ছক কষেছিলেন ‘ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে’ সংগঠনের এই নেতা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

স্বঘোষিত শিখ ধর্মগুরু অমৃতপাল আইএসআইয়ের মদতে পাক সীমান্তে অস্ত্র এবং মাদক চোরাচালানে জড়িত ছিলেন বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, তার নির্দেশেই অমৃতসরের জল্লুপুর খেরা এলাকায় অনুমোদনহীন একটি মাদক মুক্তিকরণ কেন্দ্র এবং একটি গুরুদ্বারে অস্ত্র মজুত করা ব্যবস্থা করেছিলেন ‘ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে’র নেতাকর্মীরা।

আনন্দবাজার বলছে, ঘটনাচক্রে এখানেও ভিন্দ্রানওয়ালের সঙ্গে তার মিল রয়েছে। ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সাবেগ সিংহের সহায়তায় আশির দশকে স্বর্ণমন্দিরকে কার্যত অস্ত্রাগারে পরিণত করেছিলেন পাঞ্জাবের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের জনক। ভারতীয় সেনার অপারেশন ‘ব্লু স্টার’-এ ভিন্দ্রানওয়াল নিহত হয়েছিলেন।

ভিন্দ্রানওয়ালের কায়দাতেই স্বাধীন এবং সার্বভৌম খলিস্তান রাষ্ট্র গড়ার আহ্বান জানিয়ে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করতেন অমৃতপাল। ‘ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে’র কোনো কমিটিতেই সংগঠনের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়া হতো না। খলিস্তানপন্থী আন্দোলনে হাওয়া দিতে সীমান্তের ওপার থেকে জোগানো হচ্ছিল প্রচুর অস্ত্র, রসদ, মাদক। গত এক বছরে সীমান্তে ড্রোনের মাধ্যমে মাদকের চোরাচালান বেড়ে যাওয়ায় অমৃতপালের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের।

অমৃতপালের বাহিনী আজনালা হামলা ছাড়া বড় ধরনের অশান্তি ছড়াতে না পারলেও ধারাবাহিক বিদ্বেষমূলক প্রচার চালিয়ে পাঞ্জাবে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটাতে বেশ কিছুটা সফল হয়েছে বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। কৃষক আন্দোলনেও প্রত্যক্ষভাবে যোগ দিয়েছিলেন অমৃতপাল।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের বক্তব্য, দুবাই আইএসআইয়ের অন্যতম বড় ঘাঁটি। কৃষি আন্দোলনে অমৃতপালের ভূমিকা দেখে তাকে বেছে নেয় পাক গুপ্তচর সংস্থা। অতীতের খলিস্তানি আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ কোনো সম্পর্ক ছিল না অমৃতপালের। কিন্তু আইএসআইয়ের সংস্পর্শে এসেই তিনি খলিস্তানি আন্দোলন নিয়ে দুবাইয়ে প্রচার শুরু করেন।

গোয়েন্দাদের দাবি, অমৃতপালকে জর্জিয়াতে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতেও পাঠায় আইএসআই। শেষে দুবাই হয়ে পাঠানো হয় ভারতে। পাঞ্জাবে ফিরে এসে মাদকবিরোধী মঞ্চ গড়ে তোলার আড়ালে খলিস্তানপন্থী আন্দোলনের সমর্থনে জনমত গড়ে তুলতে সক্রিয় হয়েছিলেন অমৃতপাল। তার মাদক-মুক্তি কেন্দ্রে মাদকাসক্তদের এত নিম্নমানের ওষুধ দেওয়া হতো যে তারা উল্টে মাদকে আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়তেন। এরপর তাদের ‘ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে’-র কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করা হতো। যে কর্মসূচির একমাত্র লক্ষ্য ছিল হিংসা ছড়িয়ে খলিস্তান গড়ার ‘মগজধোলাই’।

এর আগে গত শনিবার অমৃতপালের পালিয়ে যাওয়া এবং পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার নিয়ে বেশ কিছু বিভ্রান্তির তৈরি হয়েছিল দেশটিতে। বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে অবশ্য জানা যায়, পুলিশ অমৃতপালকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালাচ্ছে।

দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা সে সময় জানিয়েছিলেন, ‘ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে’ গোষ্ঠীর নেতা অমৃতপাল সিং একজন ‘আইএসআই এজেন্ট’। পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা তাকে ভারতে নিয়ে এসেছে খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন গড়ে তুলতে। সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়াই তার মূল উদ্দেশ্য।

আর তাই তো ‘দ্বিতীয় ভিন্দ্রানওয়ালে’ অমৃতপালকে ঘিরে ক্রমেই বাড়ছে রহস্য।

Link copied!