• ঢাকা
  • সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২, ২১ রবিউস সানি ১৪৪৭

দুই ‘বন্ধু’ পাকিস্তান-আফগানিস্তান পাল্টাপাল্টি হামলা কত দূর গড়াবে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৫, ০৭:৫১ এএম
দুই ‘বন্ধু’ পাকিস্তান-আফগানিস্তান পাল্টাপাল্টি হামলা কত দূর গড়াবে
ছবি : সংগৃহীত

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে আবার রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ লড়াই বলে মনে করা হচ্ছে। উভয় পক্ষই সীমান্তবর্তী সেনাচৌকি দখল ও ধ্বংসের দাবি করেছে, পাশাপাশি সেনা হত্যার অভিযোগও তুলেছে একে অপরের বিরুদ্ধে।

আফগান তালেবান প্রশাসনের মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, শনিবার (১১ অক্টোবর) রাতে তাদের বাহিনীর ‘প্রতিশোধমূলক’ হামলায় অন্তত ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। কাবুল ও পাকতিয়া প্রদেশে বিস্ফোরণের দুদিন পর এই হামলা চালানো হয়। ওই বিস্ফোরণের জন্য আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানকে দায়ী করেছিল।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, তাদের ২৩ জন সদস্য নিহত হয়েছে। তবে পাল্টা অভিযানে তারা ২০০ তালেবান ও সংশ্লিষ্ট ‘সন্ত্রাসী’কে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আফগান বাহিনীর হামলাকে ‘বিনা উসকানির গুলি’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

পুরোনো বন্ধুত্বে ফাটল

১৯৯৬ সালে তালেবান প্রথমবার আফগানিস্তানে ক্ষমতায় এলে পাকিস্তান ছিল তাদের স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দিকের দেশগুলোর একটি। কিন্তু ২০২১ সালে তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় ফেরার পর সম্পর্কের সেই উষ্ণতা দ্রুত হারিয়ে যায়। ইসলামাবাদের অভিযোগ, তালেবান প্রশাসন পাকিস্তানের নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) জঙ্গিদের আশ্রয় দিচ্ছে। তালেবান এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরএএস জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে টিটিপির হামলায় পাকিস্তানে অন্তত ২ হাজার ৪১৪ জন নিহত হয়েছেন। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৪৬।

সংঘাতের সূত্রপাত

গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল ও সীমান্তবর্তী পাকতিয়া প্রদেশে পরপর বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে। তালেবান সরকার দাবি করে, এসব হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে।

রয়টার্সকে এক পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই হামলার লক্ষ্য ছিল টিটিপির নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদ। যদিও তিনি নিহত হয়েছেন কি না, তা স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করা যায়নি।

ইমরান খান ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় টিটিপির সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল তালেবানের মধ্যস্থতায়। কিন্তু ইমরান সরকার পতনের পর সেই চুক্তি ভেঙে যায়। এরপর থেকেই পাকিস্তান সীমান্তের ওপারে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে বিমান হামলা বাড়ায়, যার প্রতিক্রিয়ায় এখন আফগানিস্তানও পাল্টা আঘাত হানছে।

উভয় পক্ষের অবস্থান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ তালেবান বাহিনীর শনিবারের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘আফগানিস্তান রক্ত নিয়ে খেলা করছে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি বলেন, ‘তালেবান বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।’

অন্যদিকে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইনায়াতুল্লাহ খাওয়ারিজমি এক্সে লিখেছেন, ‘আফগান ভূখণ্ডে পাকিস্তানের বিমান হামলার পাল্টা জবাব দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন কিছু ঘটলে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।’

প্রতিবেশীদের প্রতিক্রিয়া

দক্ষিণ এশিয়ার এই নতুন সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে প্রতিবেশী দেশগুলো। ইরান, কাতার ও সৌদি আরব উভয় পক্ষকে সংযম ও সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘কূটনৈতিক সমাধান ছাড়া এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরবে না।’
তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বর্তমানে ভারত সফরে আছেন, তবে নয়াদিল্লি এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

কত দূর গড়াবে

পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আফগান বিশেষজ্ঞ আসিফ দুররানি মনে করেন, সংঘাতটি বড় আকার ধারণ করার আশঙ্কা আপাতত কম। তার মতে, ‘সমস্যার মূলে রয়েছে টিটিপি ইস্যু। আফগান প্রশাসন যতদিন তাদের উপস্থিতি অস্বীকার করবে, ততদিন সীমান্তে অস্থিরতা চলবে।’

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স

Link copied!