ইউক্রেন-রাশিয়া, ইরান-ইসরায়েল, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বা ইসরায়েলের ওপর হামাস, হিজবুল্লাহসহ মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা আকাশ প্রতিরক্ষার গুরুত্ব বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত জুনে ইরানের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল। তত দিন পর্যন্ত ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম ‘অপ্রতিরোধ্য’ বলে গোটা পৃথিবীতে প্রচার ছিল।
কিন্তু হামলার পাল্টা জবাবে আয়রন ডোমকে ফাঁকি দিয়ে যখন ইরানের ছোড়া একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে আছড়ে পড়তে শুরু করল, তখন এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘স্টিল ডোম’-এর উন্মোচন করেছে তুরস্ক। ইসরায়েলের সঙ্গে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ তুরস্কের বৈরিতার ইতিহাস বেশ পুরোনো। ফলে অনেকেই তুরস্কের নতুন আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি স্টিল ডোমকে ইসরায়েলের আয়রন ডোমের জবাব হিসেবেই দেখছেন।
বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়, তুরস্কের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আসেলসান বুধবার আঙ্কারায় তাদের কার্যালয়ে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘স্টিল ডোম’-এর উন্মোচন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। একই দিন কয়েকটি নতুন প্রযুক্তি স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ১৪টি নতুন স্থাপনার উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান বলেন, এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো তুরস্কের সামরিক শক্তির বহিঃপ্রকাশ। বিমান প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আমরা প্রিয় তুরস্কের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করছি।
এর আগে গত বছরের আগস্টে এরদোয়ান সরকার আকাশ প্রতিরক্ষায় ‘স্টিল ডোম’ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। বলা হচ্ছে, এই ব্যবস্থা তুরস্কের আকাশকে সুরক্ষিত রাখতে সমুদ্রভিত্তিক এবং স্থলভিত্তিক বিমান প্রতিরক্ষা প্ল্যাটফর্ম ও সেন্সরগুলোকে একটি নেটওয়ার্কে একীভূত করে। এরদোয়ান বলেন, আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের সর্বশেষ ধাপে ৪৭টি যান রয়েছে, যার মূল্য ৪৬০ মিলিয়ন ডলার। এটি আমাদের বন্ধুদের মধ্যে আস্থা এবং শত্রুদের মধ্যে ভয় জাগিয়ে তুলবে। তবে তুরস্ক সরকার এই স্টিল ডোম ব্যবস্থাটি ঠিক কবে নাগাদ সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করবে, তা জানাননি এরদোয়ান।
তুরস্কের স্টিল ডোম প্রকল্পটির লক্ষ্য, স্থল ও সমুদ্র উভয় ক্ষেত্রে বহুমুখী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, সেন্সর এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রকে একটি নেটওয়ার্কে একীভূত করা। তুর্কি কর্তৃপক্ষের মতে, স্টিল ডোম হবে একটি সত্যিকারের ব্যাপক মাত্রার ব্যবস্থা, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে একটি আকাশ নিরাপত্তা পরিস্থিতি তৈরি করতে সক্ষম। স্টিল ডোম প্রকল্পটিতে আঙ্কারা, বসফরাস ও দারদানেলেস প্রণালির পাশাপাশি তুরস্কের বিভিন্ন অঞ্চলের আকাশ সুরক্ষারও নিশ্চয়তা দেবে। এ ছাড়া দেশটির আক্কুয়ু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো নতুন কৌশলগত স্থানগুলোর সুরক্ষাও নিশ্চিত করা হবে।
বর্তমানে ইসরায়েল, তুরস্ক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘থাড’ এবং ‘এস-৪০০’, রাশিয়ার কাছে ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’ ও ‘এস-৫০০ প্রমিথিউস’, চীনের আছে এইচকিউ-৯, জার্মানির কাছে ‘প্যাট্রিয়ট সিস্টেম’, ফ্রান্সের কাছে ‘এসএএমপি/টি’-এর মতো শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।
 
                
              
 
																 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    




































