পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারী বর্ষণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় কমপক্ষে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের চোশিটি গ্রামে ‘মেঘ বিস্ফোরণে’ বন্যা ও ভূমিধসে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ জনে। গুরুতর আহত হয়েছে ৩৮ জন। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদন বলছে, এখনো দুই শতাধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত ১৬৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। অঞ্চলটি দুর্গম হওয়ায় উদ্ধারকারীর সমস্যায় পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই এলাকায় প্রয়োজনীয় সব সাহায্য পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
কোনো জায়গায় হঠাৎ ভারী মেঘ জমে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হলে তাকে মেঘ বিস্ফোরণ বলা হয়। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের স্থানটিতে আকস্মিক বন্যার তৈরি হয়।
জম্মু-কাশ্মীরে বন্যা ও ভূমিধস প্রাণহানি
ইন্ডিয়া টুডে বলছে, গত ২৫ জুলাই থেকে ধর্মীয় উৎসব ৩০ কিলোমিটার ‘মাছেল মাত্রা যাত্রা’ শুরু হয়েছে। ট্রেক করে ‘মাছেল মাতা’ মন্দিরে (দুর্গা মন্দির) পৌঁছাতে হয়। ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীরের অন্যতম জনপ্রিয় এ যাত্রা চলার কথা। যাতে হাজার-হাজার পুণ্যার্থী অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু যাত্রার রুটে শুরু হয়েছে বিপর্যয়।
২৬ জুন থেকে পাকিস্তানে বৃষ্টিপাত সম্পর্কিত ঘটনায় ৩৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। সর্বশেষ মৃত্যুর বেশির ভাগ ঘটনা ঘটেছে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে।
গিলগিট-বালতিস্তানের আঞ্চলিক সরকারের মুখপাত্র ফাইজুল্লাহ ফারাক জানান, ঘাজার জেলায় বৃহস্পতিবার আকস্মিক বন্যায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখাওয়ার বাজিকুর জেলায় আকস্মিক বন্যায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছেন। উদ্ধার কর্মকর্তা অমজাদ খান জানিয়েছেন, ১৭ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর-পশ্চিমের বাত্তাগ্রাম জেলাতেও আকস্মিক বন্যায় ১০ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সরকারের প্রশাসক সেলিম খান জানিয়েছেন, ১৮ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বৃষ্টিপাত সম্পর্কিত ঘটনায় বৃহস্পতিবার আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
খাইবার পাখতুনখাওয়ায় প্রাদেশিক জরুরি সেবার মুখপাত্র বিলাল ফাইজি জানিয়েছেন, সিরান ভ্যালির মানসেরা জেলায় আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের কারণে আটকা পড়া এক হাজার ৩০০ পর্যটককে উদ্ধার করতে উদ্ধারকারী দল ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করেছে।
স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, জুলাই মাস থেকে গিলগিট-বালতিস্তানে বেশ কয়েকবার আকস্মিক বন্যা হয়েছে। যার ফলে করাকোরাম হাইওয়েতে ভূমিধস ঘটেছে। এই রুট পাকিস্তান ও চীন সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ও পর্যটন পথ।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং বন্যা-প্রভাবিত এলাকায় দ্রুত উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।