মানবদেহে ধীরে ধীরে হাড় ক্ষয় হতে থাকে। বয়স বাড়লে হাড় ক্ষয়ের যন্ত্রণা বোঝা যায়। হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা বা আর্থ্রাইটিস দেখা দেয়। যদিও হাড়ের সমস্যা বা জয়েন্টের ব্যথায় এখন শুধু বয়স্করাই ভোগেন না। দৈনন্দিন অভ্যাস আর জীবনযাপনের কিছু ক্রটির কারণে হাড়ের ব্যথায় এখন কম বয়সীরাও ভুগছেন। দৈনন্দিন কিছু বদভ্যাস রয়েছে যা হাড়কে দুর্বল করে দেয়। হাড়ের ক্ষয় রোধে সবার আগে এই বদভ্যাস পাল্টে নিতে হবে। তবেই হাড়ের সমস্যা প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা যাবে।
হাড় ক্ষয়ের জন্য় দায়ী দৈনন্দিন কিছু বদ অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করবো আজকের আয়োজনে_
দীর্ঘ সময় বসে থাকা
একটানা বসে থাকা শরীরের জন্য় ক্ষতিকর, এই তথ্য কম-বেশি সবারই জানা। এই অভ্যাস দেহের হাড়কেও দুর্বল করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা দ্রুত হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ায়।
ধূমপানের অভ্যাস
ধূমপান শরীরের জন্য় ক্ষতিকর। এমনকি এটি হাড় ক্ষয়ের জন্যও দায়ী। ধূমপানের কারণে টিস্যুগুলো ফ্রি রেডিক্যাল উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটি ফুসফুসের জন্য খারাপ। পাশাপাশি হাড়েরও ক্ষয় হয়। নিয়মিত ধূমপান বা তামাক ব্যবহার করলে হাড়ের ঘনত্ব তুলনামূলক কমে যায়। ধূমপান ফ্রি রেডিক্যাল হাড় সৃষ্টিকারক কোষগুলোকে ধ্বংস করে। এর ফলে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের উৎপাদন বেড়ে যায়। ক্যালসিটোনিন হরমোনের উৎপাদন কমে আসে। এমনকি ধূমপান কর্টিসল হাড়ের স্টক কমায় এবং অন্যদিকে ক্যালসিটোনিন এটি বজায় রাখে। কোনো কারণে হাড় ভেঙে গেলে ধূমপান রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং নিরাময় প্রক্রিয়া ধীরগতি হয়।
অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
শরীরে লবণের পরিমাণ বেড়ে গেলে হাড় ক্ষয় হয়। গবেষণায় দেখা যায়, অতিরিক্ত লবণ বা লবণযুক্ত খাবার খাওয়া হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস করে দেয়। কারণ লবণে সোডিয়াম থাকে। বেশি মাত্রায় সোডিয়াম গ্রহণ করলে শরীর প্রস্রাবের মাধ্যমে বেশি মাত্রায় ক্যালসিয়াম নিঃসরণ করে দেয়। যা হাড়ের জন্য ক্ষতিকর।
মদ্যপান করা
ধূমপানের সঙ্গে অনেকে মদ্যপানও করেন। অত্যাধিক মদ্যপানও হাড় ক্ষয়ের জন্য় দায়ী। মদ্যপানের অভ্যাসে শরীরে কর্টিসলের উৎপাদন বেড়ে যায়। যা শরীরের বোন স্টক নষ্ট করে দেয়। এছাড়াও শরীরে টেস্টোস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায়। এই হরমোনগুলো হাড়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সারাক্ষণ ঘরে থাকা
সারাদিন ঘরেই থাকছেন, এতেও হাড় দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কারণ শরীর প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি পাচ্ছে না। হাড় শক্তিশালী হতে ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি-এর অভাবে হাড় পাতলা হয়ে যেতে পারে। এক পর্যায়ে হাড় ভেঙেও যেতে পারে।
মোটরসাইকেল চালানো
গন্তব্যে পৌঁছাতে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন। কয়েক বছর একটানা মোটরসাইকেল ব্যবহার করলে হাড়ের ওপর প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে মেরুদন্ডের হাড়ে ক্ষয় তৈরি করে এই অভ্যাস। মোটরসাইকেল একটানা অনেকক্ষণ চালালেও কোমরে ব্যথা হয়। একসময় হাড়ের সমস্যায় চলাফেরাতেও কষ্ট হয়ে যায়।
হাড় ক্ষয়ে দৈনন্দিন জীবনের এই বদভ্যাসগুলো দায়ী। তাই কিছু অভ্যাস বাদ দিয়ে শরীরকে সক্রিয় রাখতে নতুন কিছু অভ্যাস রপ্ত করুন। বদভ্যাস পাল্টে যে অভ্যাস রপ্ত করবেন_
- নিয়মিত ব্যয়ামে পেশী সংকোচিত হয়। পেশী সংকোচন হাড়কে শক্তিশালী করে। হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে শরীরচর্চা গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত হাঁটার অভ্যাস করুন। ওয়েটলিফটিং বা অন্যান্য শরীরচর্চা করতে পারেন।
- গবেষকরা জানান, প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক ১৫০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়। তাই রান্না করা খাবারে থাকা লবণই যথেষ্ট। খাবারের সময় অতিরিক্ত লবণ নিবেন না। গবেষকরা জানান, একজন নারী যদি নিয়মিত মাত্র এক গ্রাম অতিরিক্ত সোডিয়াম বেশি গ্রহণ করলে প্রতি বছর তার হাড়ের ঘনত্বের ১ শতাংশ হারিয়ে ফেলে।
- ভিটামিন ডি এর উৎস হলো সূর্যের আলো। সারাদিন ঘরে না থেকে বাইরে বের হোন এবং সূর্যের আলো গায়ে লাগান। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে শরীরে ভিটামিন ডি প্রস্তুত হয়। যা হাড়ের জন্য় উপকারী।
- বাইরে যাওয়ার সময় নেই? শরীরে পুষ্টির অভাব মেটাতে খাওয়া দাওয়ার উপর জোর দিন। খাদ্যতালিকায় অবশ্যই ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার স্যালমন, ডিমের কুসুম রাখুন। প্রয়োজনীয় ভিটামিন পেলে হাড় মজবুত হবে।
সূত্র: আর্থ্রাইটিস হেলথ