জমকালো আয়োজনে পর্দা উঠলো ২০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের। দেশের সবচেয়ে বৃহৎ এবং পুরোনো এই উৎসবের আয়োজন করে রেইনবো চলচ্চিত্র উৎসব সাংসদ। উৎসবের শুরুতেই বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয় সবার সামনে। ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’—এই শ্লোগানে শনিবার (১৫ জানুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব চলবে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত।
জাতীয় জাদুঘরের অডিটরিয়ামে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের তরুণ সমাজ আজ উজ্জীবিত। গ্লোবালাইজেশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা বিভিন্ন সংস্কৃতির চলচ্চিত্র দেখে। এমন অনেক ছবি আছে যেগুলো থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। ঢাকা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল একটি আন্তর্জাতিক মানের উৎসব। যেখানে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এদেশের সাংস্কৃতির মিলন ঘটে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর লেবানন ও জার্মানির যৌথভাবে প্রযোজিত এবং মারিয়া ইভানোভা জেড পরিচালিত ‘দ্যা অ্যাঙ্গার’ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়।
উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উৎসবের পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল বলেন, “করোনার কারণে এবার ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পরিপূর্ণ আমেজ পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক বিদেশি মেহমান অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও, আসতে পারছেন না। আমি এই উৎসবের সাফল্য কামনা করছি।”
উৎসবে বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, “ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল একটি আন্তর্জাতিক মানের উৎসব। যেখানে ইন্ডিয়া থেকে ৩৪টি সিনেমা দেখানো হবে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প বর্তমানে বিশ্ব অঙ্গনে খুবই ভালো করেছে। সম্প্রতি রেহানা মারিয়ম নূর কান চলচ্চিত্র উৎসবে গিয়েছিল। গোয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও বাংলাদেশ বেশ ভালো করেছিল। ভারত এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র বিনিময় করে থাকে। আমরা এদেশের সিনেমা হলে আরও বেশি ভারতীয় কমার্শিয়াল সিনেমা দেখাতে চাই্।”
উৎসবে বিশেষ অতিথি সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, “চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে একটি জাতি তার ঐতিহ্যকে ধরে রাখে। আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের তরুণ সমাজের পরিচয় ঘটছে। এতে আমাদের সংস্কৃতির সমৃদ্ধি ঘটছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, “রেইনবো চলচ্চিত্র উৎসব সংসদ প্রতি বছর জাকজমকপূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালের আয়োজন করে থাকে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মর্যাদাপূর্ণ। বাংলাদেশসহ ৭০টি দেশের ২২৫টি দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। এখানের প্রতিটি ছবিই আমাদের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করছে।
বরাবরের মতোই এবারের উৎসবেও এশিয়ান ফিল্ম প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানারোমা, সিনেমা অফ দ্য ওয়ার্ল্ড, চিলড্রেন ফিল্মস্, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম মেকার সেকশনে চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।
যেসব ভেন্যুতে প্রদর্শিত হবে চলচ্চিত্র
বেশ কয়েকটি ভেন্যুতে এবার উৎসবের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে সকাল ১০.৩০, দুপুর ১টা ও বিকেল ৩টায় প্রদর্শনী শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে দেখতে পারবেন। সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। এর বাইরে, সাধারণ দর্শকদের জন্য টিকেটমূল্য ৫০ টাকা।
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে সকাল ১০.৩০ থেকে শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। যেখানে অভিভাবকরাও শিশুদের সঙ্গে এই চলচ্চিত্র বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারবেন।
জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে সব প্রদর্শনী সবাই বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারবেন। আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় আগে আসলে দেখবেন ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হবে।
অঁলিয়াস ফ্রঁয়েজ মিলনায়তনের প্রদর্শনীগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় আগে আসলে দেখবেন ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হবে।
স্টার সিনেপ্লেক্সে নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে দর্শকরা উৎসবের চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাডেমির মিলনায়তনে কেবল আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
করোনার কারণে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে এবার বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। যাদের করোনা ভ্যাকসিনের দুইটি ডোজ নেওয়া আছে, কেবল তারাই সার্টিফিকেট দেখিয়ে ভেন্যুতে প্রবেশ করতে পারবেন।