• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এফডিসিতে পিকনিক, জানে না কর্তৃপক্ষ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৩, ০৭:৪৫ পিএম
এফডিসিতে পিকনিক, জানে না কর্তৃপক্ষ

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ—বিএফডিসি নামে পরিচিত চলচ্চিত্রপ্রেমী সবার কাছে। যে প্রতিষ্ঠানটিতে কেবল চলচ্চিত্র শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীদের প্রবেশ থাকে। এদের ছাড়া অন্য কাউকে ঢুকতে হলে অনুমতি নিতে হয়। এ আঙ্গিনায় স্বপ্নের তারকাকে এক নজর দেখার জন্য, ছবির শুটিং দেখার জন্য অনেক তরুণ দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও এফডিসির গেট পার হতে পারে না। অথচ চার হাজার মানুষ কোনো লবিং ছাড়া এফডিসি চত্বর ঘুরে বেরিয়েছেন, ছবি তুলেছেন, পিকনিক করে গেছেন। অথচ এফডিসি কর্তৃপক্ষ কিছুই জানে না।

শুক্রবার (১০ নভেম্বর) এফডিসিতে এমনি ঘটনা ঘটেছে ।

এফডিসির নিরাপত্তা, পরিবেশকে ‘তোয়াক্কা’ না করে ‘স্বপ্নের ৯৩’ (এসএসসি ৯৩ সালের ব্যাচ) নামে একটি সংগঠন আয়োজন করে ৪ হাজার মানুষের ‘বন্ধুদের মিলনমেলা’। সারাদিনের এ মিলনমেলা সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় রাত ৯টায়। পুরোদিন তারা বিএফডিসির অফিসের পাশে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়িয়েছেন। জহির রায়হান কালার ল্যাব, শুটিং ফ্লোরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও বাদ যায়নি।

তবে দিনভর এত কিছুর পরও এফডিসি প্রশাসন কিছুই জানে না। কীভাবে হলো এই আয়োজন? অবাক প্রশাসনও। তাদের প্রশ্ন, ‘আরে এরা কারা, কোথা থেকে এলো!

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারা জড়ো হয়েছেন। আয়োজন শুরু হয় সকাল ৮টা থেকে। শেষ হয় রাত ৯টায়। বিকেলে ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। যেখানে অংশ নেয় শোবিজের বেশ কজন শিল্পী। সে আয়োজনে ছিল নাচ, গান ও অভিনয়ের অংশও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই আয়োজনের জন্য এফডিসির দুটি ফ্লোর ও মিলনায়তন ভাড়া নেওয়া হয়। এছাড়া ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু খোলা প্রাঙ্গণ। সরকারি স্থানে করা এ আয়োজনটির নেতৃত্ব দেন পরিচালক সমিতির সদস্য বিপ্লব শরীফ।

বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই তিনি রান্নার আয়োজন ও এফডিসিতে সামিনা টাঙিয়ে খাবার স্থান তৈরি করেন। রাত অবধি সাজানো হয় পুরো এফডিসি। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী শিল্পী ও কলাকুশলীদের নিরাপদ এ স্থানে চলে অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথিদের মহাযজ্ঞ।

এফডিসির মূল ফটক থেকে শুরু করে প্রতিটি মোড়েই নানা ধরনের ব্যানার ও ফেস্টুন। চত্বরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার বিভিন্ন জায়গায় অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আগত অতিথিরা। গাছ ও ঘাস মাড়িয়ে বসে আছেন কোনো কোনো দল।

বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয় এফডিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। ফোনে পাওয়া যায়নি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিনকে।

তবে কথা হয় কর্পোরেশনের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা এবং ফ্লোর ও সেট ইনচার্জ হিমাদ্রি বড়ুয়ার সঙ্গে। ঘটনা শুনে অবাক তিনিও। তার ভাষ্য, ‘গতকাল আমার ডে অফ ছিল। আজও তাই। এ কারণে গতকাল কী ঘটেছে তা আমি জানি না। এটা ঠিক এখন চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনসহ নানাভাবে ফ্লোর ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। পিকনিকের ঘটনা এর আগে ঘটেনি। এত মানুষ সেখানে গিয়েছিল নাকি?’

কেপিআই এলাকায় পিকনিক সম্ভব কিনা এবং তিনি ফ্লোর ইনচার্জ হলেও বিষয়টি তার গোচরে নেই কেন? জানতে চাইলে এ সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি ফ্লোর ইনচার্জ- এটা ঠিক আছে। তবে ভাড়ার বিষয়টি দেখেন অন্য এক কর্মকর্তা।’

বিষয়টি জানতে ফ্লোর ভাড়া দেওয়ার দায়িত্বে থাকা এফডিসির অতিরিক্ত পরিচালক (বিক্রয়) ও ল্যাবরেটরি প্রধান মোঃ রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘একটি রিয়েলিটি শোয়ের আয়োজন হবে বলে ফ্লোর ভাড়া নিয়েছেন একটি বিজ্ঞপনী সংস্থার কর্মকর্তা। বিষয়টি সহযোগিতা করেছেন রফ নামের একজন প্রডাকশন ম্যানেজার। নিয়ম মেনে তাদের বরাদ বাইরে আমি তেমন কিছু জানি না। এখানে তো পিকনিক হওয়ার কথাই না।’য়ার কথাই না।’’

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সদ্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া খোরশেদ আলম খসরু’র সঙ্গে। তিনিও বিস্মিত হন ঘটনা শুনে। তার ভাষায়, ‘কেপিআই হলো রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে পিকনিক বা মিলনমেলা হয় কীভাবে? এখানে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ প্রিন্ট ও নথি আছে। এখানে তো জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ।’

অন্যদিকে, বিষয়টি এফডিসির নিয়মে হয়েছে কিনা তা কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহিন সুমন।

Link copied!