• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,
রিভিউ

জুবিলী: সিনেমাময় এক সময়ের গল্প


ফাহিম ইবনে সারওয়ার
প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৩, ০৫:১৮ পিএম
জুবিলী: সিনেমাময় এক সময়ের গল্প

বড় পর্দায় নিজেকে দেখার মধ্যে অন্যরকম আনন্দ আছে। আর সেখানেই নিজেকে দেখতে চেয়েছিল বিনোদ দাস। তাই বোম্বের সবচেয়ে বড় ফিল্ম স্টুডিও রায় টকিজে চাকরি নেয় সে। বিশ্বস্ততা অর্জন করে রায় টকিজের মালিক শ্রীকান্ত রায়ের। ঘটনাচক্রে রায় টকিজের সবচেয়ে বড় তারকা মদন কুমার হয়ে ওঠে বিনোদ দাস। অথচ মদন কুমার হওয়ার কথা ছিল জামশেদ খানের। কে এই জামশেদ খান?

এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে বিক্রমাদিত্য মোটওয়ানে পরিচালিত জুবিলী সিরিজে। গত ৭ এপ্রিল ওটিটি প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছে সিরিজটি।

১৯৪০ এর দশকের বোম্বের স্টুডিওভিত্তিক সিনেমা জগতকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে সিরিজটি।

যেখানে শ্রীকান্ত রায় এবং মদন কুমারের সাথে আছেন রায় টকিজের আরেক মালিক, নায়িকা সুমিত্রা কুমারী। লাখনৌ থেকে বোম্বেতে নায়িকা হতে আসা নিলুফার কোরেশী, ফিল্ম প্রোডিউসার শমসের সিং ওয়ালিয়া এবং দেশভাগের ক্ষত বুকে নিয়ে করাচি থেকে আসা জয় খান্না। ঘটনাচক্রে এরা সবাই জড়িয়ে পড়ে একই আবর্তে। আর এদেরকে নিয়েই জুবিলী। সম্ভবত এখন পর্যন্ত ভারতীয় ওয়েব সিরিজের ইতিহাসে সবচেয়ে নিখুঁত নির্মাণ।

চিত্রনাট্য থেকে শুরু করে সিনেমাটোগ্রাফি, এডিটিং, সঙ্গীত, সেট ডিজাইন, কস্টিউম, আর্ট, প্রোডাকশন ডিজাইন সবগুলো শাখায় অসাধারণ কাজ হয়েছে। প্রথম সিজনে দশটি পর্ব রয়েছে যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য গড়ে ৫০ মিনিটের মত।

‘উড়ান’, ‘লুটেরা’ ছবির মাধ্যমে বিক্রমাদিত্য মোটওয়ানে নিজের সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছিলেন। এছাড়াও সেকরেড গেমসের মত ওয়েব সিরিজেও ক্রিয়েটর হিসেবে ছিলেন তিনি। তবে জুবিলী তার সবগুলো কাজকে ছাড়িয়ে গেছে। যে বিস্তৃত পরিসরে তিনি গল্পটি বলেছেন তা সত্যিই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।

বিনোদ দাস ওরফে মদন কুমারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অপরশক্তি খুরানা। এখন পর্যন্ত এটাই তার করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। বলতে গেলে জুবিলীর গল্প এগিয়েছে মদন কুমারকে কেন্দ্র করেই।

অপরশক্তির ক্যারিয়ারে মাইলস্টোন হয়ে থাকবে এই চরিত্রটি। অপরশক্তি খুরানা যেন বিলীন হয়ে গেছেন মদন কুমারের মাঝে। এখানেই একজন অভিনেতার স্বার্থকতা।

জয় খান্না চরিত্রে সিদ্ধান্ত গুপ্ত চমক দেখিয়েছেন। তার মত নতুন অভিনেতার জন্য এই চরিত্রটি বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল, সেই চ্যালেঞ্জ বেশ হেসেখেলেই উতরে গেছেন তিনি।

স্বল্প সময়ের হলেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিল জামশেদ খান, যাতে অভিনয় করেছেন নানদিস সাধু। নিজের চরিত্রের প্রতি সুবিচার করতে পেরেছেন এই অভিনেতা।

রাম কাপুর সবসময়ই মাপা অভিনয় করেন। শমসের সিং ওয়ালিয়া হিসেবে তিনি একদম দশে দশ। আর যার কথা না বললেই নয় তিনি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। শ্রীকান্ত রায় এর মত চরিত্রকে ঠিক মেজাজে ধরে রাখা যে কোনো অভিনেতার জন্যই বেশ শক্ত। এখানে প্রসেনজিৎ প্রমাণ করেছেন তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী, যেমনটি শ্রীকান্ত রায় নিজেও।

সিরিজের নারী চরিত্রগুলোও দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে দর্শকদের। বিশেষ করে নিলুফার চরিত্রে ওয়ামিকা গাব্বি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি শুধু মুগ্ধতাই ছড়িয়েছেন। সুমিত্রা কুমারীর চরিত্রে অদিতি রাও হায়দারি ছিলেন উজ্জ্বল। গ্ল্যামার জগতের সাথে জড়িয়ে থাকা নন-গ্ল্যামারাস রত্না দাসের চরিত্রে শ্বোয়েতা প্রাসাদও মানানসই ছিলেন।

সিনেমাটোগ্রাফার প্রতীক শাহ ক্যামেরার মাধ্যমে ১৯৪০ এর দশককে জীবন্ত করে তুলেছেন। তাকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে আরতি বাজাজের সম্পাদনা এবং অমিত ত্রিভেদীর সঙ্গীত। জুবিলী শুধু সিনেমার গল্প নিয়েই থাকেনি, সিনেমাকে কেন্দ্র করে ১৯৪৭ এর দেশভাগ, সোভিয়েত-আমেরিকা দ্বন্দ্ব এসব ঘটনাকেও সচেতনভাবে তুলে এনেছে।

সব মিলিয়ে শিল্প, রাজনীতি, সময় আর ব্যক্তিত্বের মিশেল ঘটেছে জুবিলীতে। 

Link copied!