• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

নজরুলের গান বিকৃতি: রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে বললেন শিল্পীরা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৩, ০৮:০৭ পিএম
নজরুলের গান বিকৃতি: রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে বললেন শিল্পীরা

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে ভারতের অস্কারজয়ী সংগীত পরিচালক এ আর রহমানের বিরুদ্ধে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ঘটনা নিয়ে রাজাকৃষ্ণ মেনন ‘পিপ্পা’ নামের একটি সিনেমা নির্মাণ করেছেন। এতে নজরুলের লেখা ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটি ব্যবহার করা হয়েছে। সংগীতশিল্পী ও নেটিজেনদের অভিযোগ, গানটিকে বিকৃত করেছেন এ আর রহমান।

সংগীতশিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “তিনি আমাদের জাতীয় কবি। আমাদের বাংলাদেশের কবি। বাংলা ভাষার ওপর তার যে কবিতা বা গান, তার ভেতর বুঝতে হবে। এই যে শব্দ ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ এর বিশাল বক্তব্য আছে এবং আন্দোলনের বিশাল কথা আছে। প্রতেকটি শব্দকে আমি মনে করি একেকটি বিস্ফোরক। ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ এই কথাটি লিখেছিলেন বৃটিশ বিরোধের সময়। 

এ আর রহমানকে আমি সম্মান করি। তিনি অনেক বিখ্যাত। কিন্তু আমাদের জাতীয় কবির গান নিয়ে তারা এমন করেছে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। প্রতেকটি শব্দের আলাদা অর্থ রয়েছে। এগুলো আন্দোলনে ব্যবহার করা হয়েছে। নজরুলের গানকে নষ্ট করার অধিকার তাদের নেই। এটাকে ইচ্ছা করে অপমান করা হয়েছে। আমি মনে করি রাষ্ট্রীয়ভাবে এর প্রতিবাদ করা দরকার। রাষ্ট্র কেন কথা বলে না, রাষ্ট্র অনেক কিছু নিয়ে কথা বলে, সংগীত নিয়ে কথা বলে না। শিল্প নিয়ে কথা বলে না। এ আর রহমানের এই গানটি নিয়ে আমাদের সকলের প্রতিবাদ জানানো উচিত।”

একইভাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংগীত শিল্পী বাপ্পা মজুমদার। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “আমি নিজেও এ আর রহমানের ভক্ত। ফেসবুক খুলে এ রকম একটা কাজ দেখে আমি নিজেও ক্ষুব্ধ। আমার ধারণা, এ আর রহমানকে এককভাবে দায়ী না করে, এর সঙ্গে ক্রিয়েটিভ টিমে যারা ছিলেন, তাদেরকেও দায়ী করতে হবে। যারা গানটি নির্বাচন করেছেন তারা নিশ্চয় গানটি সম্পর্কে জানেন এবং খোঁজ-খবর নিয়েছেন। আমি মোটামোটি নিশ্চিত এর সঙ্গে বাংলা ভাষার লোকজনও আছে।”

এ আর রহমানের মতো সংগীতশিল্পীর কাছ থেকে এমন কাজ আশা করেননি তার বাঙালি ভক্তরা। এরই মধ্যে কলকাতার শিল্পীরা যেমন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তেমনি বাংলাদেশের অনেকে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। এবার বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি অনিন্দিতা কাজী।

ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে অনিন্দিতা বলেন, “সুর যেমনই হোক, প্রত্যেক গানেরই একটা নিজস্ব ভাষা, ভঙ্গি ও ভাব থাকে। সেটা নষ্ট হলে স্বভাবতই গানের আসল সৌন্দর্য নষ্ট হয়। গানে তো শুধু সুরের নয়, ভাবেরও একটা জায়গা থাকে। রহমানের এই গানের ক্ষেত্রে হয়তো এমনটাই ঘটেছে বলে মানুষের পছন্দ হচ্ছে না।”

‍‍`কারার ওই লৌহ কপাট‍‍` গানটি জহির রায়হান ব্যবহার করেছিলেন ‍‍`জীবন থেকে নেয়া‍‍` (১৯৭০) চলচ্চিত্রে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই তুলনাটিও আনছেন অনেকে। আর আজই জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হান ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখিছেন, “এ আর রহমানসহ, ‘পিপা’ (নাকি পিপ্পা?) ছবির পরিচালক, প্রযোজকের বিরুদ্ধে দুই বাংলার মানুষের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিকৃতির মামলা ঠোকা উচিত। কারার ওই লৌহকপাট- বৃটিশ উপনিবেশ বিরোধী এবং পরে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন ও যুদ্ধের প্রেরণাদায়ী গানগুলোর একটি। নজরুলের এই গান এ অঞ্চলের একটি নির্দিষ্ট সময়ের বিপ্লবী-বিদ্রোহীদের মানসিকতা ধারণ করে জনমানুষের কাছে পৌঁছেছিল। কয়েক যুগ পর এই একই গান তার আদি সুর অবিকৃত রেখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও একই ভূমিকা পালন করেছিল।"

অনল রায়হান ওই পোস্টেই আরো লিখেছেন, "কারার ওই লৌহকপাট একটি ঐতিহাসিক গান। ঐতিহাসিকভাবেই এ গানের চরিত্র উপনিবেশিক ও পুঁজিবাদী শোষণের বিরুদ্ধে জনগণের সংগ্রাম ও বিপ্লবীযোদ্ধাদের প্রেরণার গান। যে কারণে বৃটিশ সরকার নজরুলের এই গানটিকে নিষিদ্ধ পর্যন্ত করেছিল। আর এই গানটাকেই এ আর রহমান তার সৃজনশীলতার নিরীক্ষাগারে কাটাছেঁড়া করলেন একটি পুঁজিবাদী শিল্প উৎপাদন করার জন্য। রবীন্দ্র-নজরুল-মোজার্ট-লালনের আরও একশ সুর নিয়ে রহমান সাহেব তার সৃজনী ক্ষুধা মেটাক কিন্তু যে সংগীতের সুর ও কথা ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে, কোনো একটি সময়ের মানুষের ঐক্যবদ্ধ আবেগ ও বুদ্ধিমত্তা ধারণ করে- তাকে বিকৃত করাকে আমি বলব সাংস্কৃতিক ধর্ষণ। এ আর রহমান এই অন্যায় করেছেন। পিপা ছবির বিকৃত ‘কারার ওই লৌহকপাট’ গানটি আইন করে নিষিদ্ধ করা উচিত ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশে।”

Link copied!