ইসরায়েলের সঙ্গে ইরনের যুদ্ধ চলছে ঠিক সেই সময়ে যুদ্ধ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন ইরানের প্রভাবশালী চলচ্চিত্র নির্মাতা জাফর পানাহি।
বুধবার ১৮ জুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে জনগণের জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন এই নির্মাতা।
ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক দীর্ঘ বিবৃতিতে এই পরিচালক বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের সময় এসেছে।
চলতি বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাহানির ছবি ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’ স্বর্ণপাম জেতে। সে সিনেমাতেও ইরানের শাসনব্যবস্থা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন তিনি।
বুধবার ইনস্টাগ্রামে দেওয়া বিবৃতিতে পানাহি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা ইরান ও ইসরায়েল-উভয় পক্ষকে সামরিক হামলা বন্ধ এবং বেসামরিক মানুষ হত্যা থামাতে অবিলম্বে ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়।
পানাহি আরও বলেছেন, এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো বর্তমান শাসনব্যবস্থার অবিলম্বে বিলুপ্তি এবং জনগণের জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা।
নির্মাতা লিখেছেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো সংশয় নেই; আমি আমার অবস্থান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি। আবারও বলছি, আমার মাতৃভূমি ইরানের ওপর আক্রমণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ইসরায়েল আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধ-আক্রমণকারী হিসেবে বিচারের মুখোমুখি হওয়া উচিত।’
তবে তার এ অবস্থান যেন বর্তমান ইরানি শাসকগোষ্ঠীর চার দশকের দুর্নীতি, নিপীড়ন, অপশাসন ও অযোগ্যতাকে আড়াল করে না, সেই কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
স্বর্ণপাম জেতা পানাহি লিখেছেন, ‘এই সরকার না শক্তি, না ইচ্ছা, না বৈধতা কোনোটাই রাখে না দেশের শাসন চালিয়ে নেওয়ার বা সংকট মোকাবিলায়। এ ব্যবস্থার সঙ্গে থাকা মানে হলো আরও পতন, আরও নিপীড়নের ধারাবাহিকতা দেখা।’ পানাহি সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া গেছেন। সেখানে ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’ ছবির জন্য সিডনি চলচ্চিত্র উৎসবের শীর্ষ পুরস্কার জিতেছেন তিনি।
‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’ দিয়ে ২২ বছর পর কান উৎসবে ফেরেন পানাহি। সিনেমাটির রিভিউয়ে বিবিসি লিখেছে, ‘এটি এমন এক সিনেমা, যা ক্ষোভে ঠাসা। এমন এক প্রতিশোধকেন্দ্রিক থ্রিলার, যা নিপীড়ক শাসনব্যবস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করে।’ কান চলচ্চিত্র উৎসবে শীর্ষ পুরস্কার জিতেও ইরানি সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন জাফর পানাহি।
পুরস্কার গ্রহণের পর তিনি মতপার্থক্য ও সমস্যাকে পাশে সরিয়ে রেখে ইরানিদের প্রতি এক হওয়ার আহ্বান জানান, ‘এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, আমাদের দেশ ও দেশের স্বাধীনতা। আসুন, আমরা এক হই। কী পারব, কী করব, কিংবা কী করব না, কেউ আমাদের বলার অধিকার রাখে না।’
ছবিটি সাবেক রাজনৈতিক বন্দীদের একটি দলকে নিয়ে, যারা সন্দেহভাজন একজনকে অপহরণ করে। তাদের ধারণা, ওই ব্যক্তির হাতেই কারাগারে তারা নির্যাতিত হয়েছে। পানাহির ভাষ্য অনুযায়ী, ছবির প্রেরণা এসেছে তার নিজের ইরানে বন্দিজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে।
রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণার অভিযোগে পানাহিকে দুবার কারাবন্দী করা হয়েছিলেন। তার ওপর চলচ্চিত্র নির্মাণ, গণমাধ্যমে কথা বলা ও দেশত্যাগের ওপর ১৪ বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি গোপনে সিনেমা নির্মাণ করে গেছেন।