মাদকসহ মডেল গ্রেপ্তার— দেশে এমন খবর নতুন নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে মডেল ও অভিনেত্রী পরিচয়ে নানারকম অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌ নামে দুজনকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ‘মডেল’ পরিচয় সামনে রেখে এই খবরটি ফলাও করে প্রকাশ করছে গণমাধ্যম। এরপর দেশের শিল্পী সমাজ নড়ে বসেছেন। তারা বলছেন, কতিপয় মডেল নামধারীর কারণে প্রকৃত শিল্পীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
তথাকথিত মডেল ও অভিনেত্রীরা মিডিয়ার আগাছা বলে মনে করেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। তার মতে, ইচ্ছা হলেই কেউ একজন নিজের গায়ে মডেল বা অভিনেত্রীর তকমা লাগিয়ে দেন। কিন্তু অভিনেত্রী হওয়া অতো সহজ না। বিজ্ঞাপনের কোনো একটা কোনায় অংশ গ্রহণ করলেই সে মডেল বা অভিনেত্রী হয়ে যায় না।
শাহনাজ খুশি বলেন, “একজন মানুষ হঠাৎ কিছু টাকা, কিংবা ত্রাণ বিতরণ করে অথবা মেম্বার-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে, কোনো রাজনৈতিক দলে নাম লেখালেই যেমন রাজনীতিবিদ হয়ে যায় না। তেমনি কেউ কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতায় আবেদন করেছিল অথবা সম্পর্কের সুবাদে বা টাকা-ক্ষমতার জোরে ২-৪টা নাটক, বিজ্ঞাপনের কোনো এক কোনায় অংশগ্রহণ করলেই সে মডেল বা অভিনেত্রী হয়ে যায় না। এখন তো কারো অভিনয় করবার শখ থাকলেই প্রোফাইলে মডেল-অভিনেত্রী লিখে দেয়।”

তথাকথিত মিডিয়াকর্মীদের এমন কর্মকাণ্ডে বিরক্ত অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম। তিনি বলেন, “প্রকৃত শিল্পীরা কখনোই এমন অপকর্ম করেন না। সাংস্কৃতিক কাজেই তারা নিজেদের জড়িয়ে রাখেন। মডেল ও অভিনেত্রী পরিচয় দিয়ে যারা বাজে কাজ করে গ্রেপ্তার হচ্ছেন তাদের জন্য দেশ ও দেশের বাইরের মানুষের কাছে আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। এটা সত্যিই আমাদের জন্য ক্ষতিকর।”
এসময় তিনি গণমাধ্যমকেও এ ধরনের খবর প্রচারের আগে যাচাই-বাছাই করার অনুরোধ করেন। সেইসঙ্গে মডেল নামধারীদের গ্রেপ্তার করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন দেশের জনপ্রিয় এই অভিনেতা।
অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম বলেন, “ব্যক্তিগত পরিচয়, প্রভাব, বাহ্যিক সৌন্দর্য এবং কিছু ক্ষেত্রে কপালের জোরে দুই একটি বিজ্ঞাপন বা নাটকে কাজ করলেই তাকে মডেল বা অভিনেত্রী বলা যায় কি না সেই ভাবনাটা এখন জরুরি হয়ে উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কেউ মজা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্রেন্ডলি মেইড ভিডিওতে অভিনয় করেছে, মডেল হিসেবে হয়তো ছবি আছে বাসার পাশের দর্জি দোকানে অথবা একটা দুটো বিলবোর্ডে রয়েছে, সেও নিজেকে মিডিয়াতে অ্যাক্টর বা মডেল দাবি করছে। এবং তার জীবনের যত ক্রাইম বা খবর— সবখানে শিরোনাম হবে মডেল বা অভিনয়শিল্পী! যা মূল ধারার আসল শিল্পীদের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠছে ক্রমশ।”

আহসান হাবিব নাসিম আরো বলেন, ‘‘যারা সিরিয়াসলি, প্রফেশনাল এথিক্সসহ মডেলিং বা অভিনয়ের কাজটি করে, তাদের প্রায়শই বিব্রত হতে হয় আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবের কাছে। শুনতে হয় ‘দেখলাম তোমাদের এক মডেল-অভিনেতা এই কু-কর্ম করেছে’! যা খুবই অসম্মানজনক ও বিব্রতকর। এর ফলে ক্রমশ এই পেশার মানুষ সম্পর্কে এক ধরনের অনাস্থা ও অসম্মান তৈরি হয়েছে সমাজে। যা হয়ে উঠতে পারে অপ্রত্যাশিত সোশ্যাল ট্যাবু।”
বিনোদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে উদগ্রীব নতুন প্রজন্মকে এরকম বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখীন যেন না হতে হয়, সেটির জন্য গণমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার অনুরোধ করেন নাসিম।