জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে এক ব্যক্তিকে ডেভিলস ব্রেথ বা স্কোপোলামিন ব্যবহার করে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। এ সময় ভুক্তভোগীর কাছে থেকে ৪৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয় বলে জানা গেছে।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম বরকত হলে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম ওয়ালিউল্লাহ (৩০)। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জের নোয়াগাঁও এলাকায়। তিনি ঢাকার তিতুমীর সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) পাস করে বর্তমানে একটি বেসরকারি জুতা কোম্পানিতে চাকরিরত আছেন।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হলেন অসিত পাল। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি শহীদ সালাম বরকত হলের ২১৪/এ নং কক্ষে থাকেন। এ ছাড়া তার সঙ্গে আরও তিনজন এ কাজে অংশ নেয় বলে নিশ্চিত করেন ভুক্তভোগী ওয়ালিউল্লাহ। তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুক্তভোগী ওয়ালিউল্লাহ খিলগাঁও থেকে সদরঘাটের উদ্দেশে বাসে উঠেন। এ সময় তাকে অনুসরণ করেন কয়েকজন যুবক। পরবর্তী সময়ে তাকে ভয়ংকর মাদক ডেভিলস ব্রেথ বা স্কোপোলামিন প্রয়োগ করা হয়। আর এ মাদক প্রয়োগ করার ফলে ভুক্তভোগী ওয়ালিউল্লাহ অন্ধভাবে অনুসরণ করতে থাকেন অসিত ও তার সঙ্গীদের। এভাবে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম বরকত হলে আনা হয়। এ সময় তাকে হলটির ২১৪/এ কক্ষে নিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। মারধরের মুখে তার কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। তবে টাকা দিতে না পারায় আরেক দফা মারধর করে তাকে ২০০ টাকা দিয়ে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে তিনি হল থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের কাছে সহায়তা চান।
এদিকে এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে নিয়ে সম্ভাব্য কক্ষগুলো পরিদর্শন করেন সালাম বরকত হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুন্ডু। পরিদর্শনকালে ভুক্তভোগী ওয়ালিউল্লাহ অসিত পালের রুমে গিয়ে নিশ্চিত করেন যে সেখানেই তাকে নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে রুম তল্লাশি করে নির্যাতনের আলামত মেলে। এছাড়া ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক সেবনের বিভিন্ন আলামত পাওয়া যায়।
হলের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই কক্ষটিতে প্রায় সময় নানা ব্যক্তিদের এনে জিম্মি করে মারধর করা হয় এবং টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এদিকে অসিত পালের বিরুদ্ধে হলের আভ্যন্তরে ইয়াবা সরবরাহের ও অভিযোগ তুলেছেন একাধিক শিক্ষার্থী।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ওয়ালিউল্লাহ বলেন, “আমি আমার গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য খিলগাঁও থেকে বাসে উঠি। পতিমধ্যে আমাকে মাদক প্রয়োগ করে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা হয়। যখন কিছুটা জ্ঞান ফেরে তখন আমি দেখি আমাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয়েছে। এরপর আমাকে শহীদ সালাম বরকত হলের ২১৪নং কক্ষে নেওয়া হয়।”
তিনি আরও বলেন, “কক্ষে নিয়ে আমাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। এ সময় ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। আমার কাছে থাকা ৪০ হাজার টাকা নিয়ে নেওয়া হয় এবং আমার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিকাশের মাধ্যমে আরও পাঁচ হাজার টাকা আনা হয়। কিন্তু তারা আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করে আমাকে বেধড়ক মারধর করতে থাকে। এসময় আমাকে জিআই পাইপ দিয়ে পেটানো হয়। চাকু বের করে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলানোর হুমকি দেওয়া হয়।”
ওয়ালিউল্লাহ আরও বলেন, “পরবর্তীতে আর টাকা দিতে না পারলে মারধর করে ২০০ টাকা দিয়ে আমাকে ক্যাম্পাস ছাড়তে বলা হয়। পরে আমি হল থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীদের সহযোগীতা নেই। এছাড়া আমায সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা তুলে ধরি।”
এ ব্যাপারে শহীদ সালাম বরকত হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুন্ডু বলেন, “ওনার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা অন্যায় হয়েছে। আমি বিভিন্নভাবে প্রমাণ পেয়েছি ঘটনার সঙ্গে আমার হলের শিক্ষার্থী জড়িত। এ বিষয়টি অধিকতর তদন্তের দাবি রাখে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, “আমরা এমন একটি গুরুতর অভিযোগ পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট হল প্রাধ্যক্ষকে প্রাথমিক তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছি। এ ধরনের অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”