• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ধ্বনি: সুস্থ সংস্কৃতির নান্দনিক চর্চার সংগঠন


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৩, ১১:৫৭ এএম
ধ্বনি: সুস্থ সংস্কৃতির নান্দনিক চর্চার সংগঠন
ছবি: প্রতিনিধি

মুক্ত বুদ্ধি ও মুক্ত সংস্কৃতি চর্চার চরণক্ষেত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সংস্কৃতিক রাজধানী নামে পরিচিত। এখানকার পরিবেশ মুক্ত প্রাণের সন্ধান করে। বিনোদনের বিভিন্ন মাধ্যমের কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি একেবারেই আলাদা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে বিভিন্ন ভাবে এখানে সাংস্কৃতিক চর্চা চলতে থাকে। গড়ে ওঠে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক সংগঠন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সাংস্কৃতিক সংগঠন ছিল অগ্নিবীণা। দ্বিতীয়  সাংস্কৃতিক সংগঠন শতদল।  
পরবর্তীতে ধ্রুপদ, সংস্কৃত সংসদ, উচ্চারণ সংসদ, বিবর্তন ও বৈতালিক, উত্তরায়ন,জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার, রোটারেক্ট ক্লাব অব জাহাঙ্গীরনগর, জাহাঙ্গীরনগর সায়েন্স ক্লাব, লিও ক্লাব অব জাহাঙ্গীরনগর ইউনির্ভাসিটি, জাহাঙ্গীরনগর স্টুডেন্টস ফিল্ম সোসাইটি, জাহাঙ্গীরনগর ইউনির্ভাসিটি কম্পিউটার এসোসিয়েশন, ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার জাহাঙ্গীরনগর শাখা, সাংস্কৃতিক পরিষদ, জাসাস, জাহাঙ্গীরনগর ইউনির্ভাসিটি ডিবেটিং সোসাইটি, জলসিঁড়ি, জাহাঙ্গীরনগর ইউনির্ভাসিটি ডিবেটিং অর্গানাইজেশন, চারণ সংস্কৃতিক কেন্দ্র,বাধন, উত্থানপাঠ, প্রপদ,জাহাঙ্গীরনগর ইউনির্ভাসিটি এডুকেশন ক্লাবসহ জন্ম হয় নানা সাংস্কৃতিক সংগঠনের। এই সংগঠনগুলো শুধু সংস্কৃতি চর্চা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া নানা অনিয়ম, অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ,প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

তেমনি একটি সংগঠন গড়ে উঠেছে নাম ‍‍`ধ্বনি‍‍`। এই সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবৃত্তি চর্চা ও বোধের জগতের মহাসত্যের উন্মোচন নিয়ে "দিগন্তে চলো শব্দ যেথায় সূর্যসত্য” এই শ্লোগানকে ধারণ করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যেখানে কবিতা যেন দিগন্তে ছুটে চলা এক মহাসত্য। যার কোনো স্থান-কালের সীমা নেই।

প্রতিদিন নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে বাংলাভাষার শব্দভান্ডারকে আয়ত্ব করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায় ‘ধ্বনি’। টিএসসির ৯নং কক্ষে প্রতিদিন বিকালে শোনা যায় শুদ্ধ উচ্চারণের অবিরাম চেষ্টা আর আবৃত্তির ঝংকার।
আকাশে বাতাসে অনুরণিত হয় সুস্থ সংস্কৃতির নান্দনিক চর্চার ঢেউ।

ধ্বনির পথচলা শুরু ১৯৯৬ সালের ১২ ই অক্টোবর। দুই দশক পেরিয়ে ধ্বনি এখন ২৮ বছরে পা রেখেছে। বর্তমানে এর মোট সদস্য সংখ্যা  ৪০০ জন এর অধিক। এই অনন্য সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের  মননশীল দৃষ্টিভঙ্গি,আবৃত্তি, বাক উৎকর্ষতা ও শুদ্ধ উচ্চারণ চর্চার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

ধ্বনি সদস্যরা নিজেদের অবদান রেখে চলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের অঙ্গনেও। জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক উৎসব ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তারা সবসময় সুনাম বয়ে এনেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য।

পাশাপাশি বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ এবং জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাথে যুক্ত হয়ে বাংলা সাংস্কৃতির অঙ্গনে অবদান রেখে চলেছে ধ্বনি। সমাজের বিভিন্ন অনিয়ম, শোষণ, নিপীড়ন, অসংগতির বিরুদ্ধে মঞ্চে ও রাজপথে নিরন্তর ভূমিকা রেখে চলেছে এই সংগঠনটি। তাই এটিকে সাংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন হিসেবেও মনে করেন এর সদস্যরা।

ধ্বনির নিয়মিত কার্যক্রমের ভেতর রয়েছে সাপ্তাহিক কবিতা আবৃত্তির আসর, মাসিক পাঠচক্র, জ্বালো ঐতিহ্যের আলো, বাক্ উৎকর্ষ বিষয়ক কর্মশালা এবং প্রতিবছর ধ্বনি তিন থেকে পাঁচদিন ব্যাপী আবৃত্তি উৎসব আয়োজন করে।

ধ্বনির উল্লেখযোগ্য প্রযোজনার মধ্যে রয়েছে-পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে, কপিলা, শেষের কবিতা, পুরাণের গহীন ভিতর, হীরক রাজার দেশে, হাজার বছর ধরে পদ্মানদীর মাঝি, অসময়ের ইশতেহার, প্রশ্ন রাখি কোথা, তোমার আমার এই যুদ্ধক্ষেত্রে প্রমুখ।

ধ্বনি আবৃত্তি চর্চার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের নানা যৌক্তিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০১০ সালের ২৭ নভেম্বর তৎকালীন ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক সংকট ও অন্যায়ের প্রতিবাদমূলক আন্দোলনে ধ্বনির অংশগ্রহণের প্রেক্ষিতে অন্যায়কারীদের দোসররা ধ্বনিকক্ষে অগ্নিসংযোগ করে। ফলে পূর্ববর্তী সব নথি, বই, তথ্যভান্ডার, স্ক্রিপ্টসহ সবকিছু পুড়ে যায়। ধ্বনি একেবারে ভস্মীভূত হয়ে যায়। সেখান থেকে ধ্বনি আবার ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠে এবং বর্তমানে একটি নান্দনিক আবৃত্তি চর্চাকেন্দ্র হিসেবে দেশে প্রসিদ্ধ লাভ করে।

ধ্বনির বর্তমান সভাপতি মো. মনিরুল ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, "ধ্বনি শুরু থেকে কবিতা আবৃত্তি, প্রমিত উচ্চারণ ও শুদ্ধ বাচনভঙ্গি নিয়ে কাজ করে আসছে। ধ্বনি সর্বদা বাংলা ভাষাকে ধারণ করার চেষ্টা করে এবং ভাষাকে নান্দনিক রূপ দিতে কাজ করে থাকে।
কবিতার মাধ্যমে যেমন ভালোবাসা যায় তেমনি বিপ্লব ও করা যায় । ধ্বনি সব সময় অন্যায়, অত্যাচার, অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। ২০১০ সালে ধ্বনির কক্ষ অগ্নিসংযোগ হয় তারপরও ধ্বনি থেমে থাকেনি । নতুন উদ্যমে ধ্বনির কার্যক্রম শুরু হয়।"

Link copied!