চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শতভাগ আবাসন, চাকসু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারসহ মোট ৭ দফা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
সোমবার (১৯ মে) দুপুর বেলা সাড়ে ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে মিছিল বের করা হয়। মিসিলটি প্রশাসনিক ভবন, শহীদ মিনার, কাটা পাহাড় রাস্তা হয়ে জিরো পয়েন্টে এসে শেষ হয়। এরপর সেখানে বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাধারন শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা, ‘চবি শিবিরের কয় দফা, সাত দফা সাত দফা’, ‘মাথার ওপর ছাতা দে, নইলে আবাসন ভাতা দে‘, ‘কলায় জট কেনো?, প্রশাসন জবাব দে‘, ‘ইসলামী ছাত্রশিবির, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিক্ষোপ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে ইসলামী ছাত্রশিবির চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী বলেন, “জুলাই পরবর্তী সময়ে আমাদের প্রত্যাশা ছিল শহীদ হৃদয় তরুয়া ও শহীদ ফরহাদের ক্যাম্পাসে আমূল পরিবর্তন হবে, কিন্তু তার কিছুই হয়নি। চবির ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধার বাহিরে, তাদের আবাসন সুবিধাও এই প্রশাসনকেই নিশ্চিত করতে হবে। বহুল প্রতীক্ষীত সমাবর্তনেও এই সুশীল, এনজিও মার্কা প্রশাসন প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে কিছু আদায় করতে পারে নাই, যেটা আমাদের জন্য লজ্জার। যারা আমাদের ভাইদের শহীদ করেছে, তারা কেন এখানো বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে রয়েছে। এর থেকে বড় লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।”
ইসলামী ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, “গত আট মাসে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেবলমাত্র আইওয়াশ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মূল ও ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন করতে পারেনি। সমাবর্তনে ড. ইউনুস স্যারসহ এই প্রশাসনের কেউই জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের দুই শহীদের নাম একবারের জন্যও নেননি। দাবি আদায়ের জন্য কেন আট মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও একটার পর একটা ছাত্রসংগঠনকে ভিসি অফিসে গিয়ে স্মারকলিপি দিতে হয়? আপনারা ভিসি, প্রোভিসি আপনার যোগ্যতায় হোননি, হয়েছেন এই ২১০০ একরের ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর সম্মতিক্রমে।”
চবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহীম সাত দফা দাবি উস্থাপন করে বলেন, “ভিসি স্যার বলেছিলেন অবৈধ নিয়োগের মাধ্যমে কোনো শিক্ষককে রাখবেন না, তাহলে সেই শিক্ষকদের সঙ্গে আপনারা কিসের সেমিনার করেন, কিসের কনফারেন্স করেন। এই জুলাই বিপ্লবে আপনাদের অবদানও আমাদের জানা আছে। বিপ্লবকে ধারণ করে রাজপথে দাড়ানো শিক্ষকদেরও আপনারা অপমান করেছেন। আপনাদের হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই ছাত্রশিবির কারও লাঠিয়াল বাহিনীর ভূমিকা পালন করবে না, ছাত্রশিবির শুধু ২৩০০ একরের এই ভূমিতে শুধু শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করবে।”
ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপস্থাপিত সাত দফা দাবি হলো-
১. শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং আবাসন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অনাবাসিক সকল শিক্ষার্থীকে আবাসন ভাতা প্রদান করতে হবে।
২. সকল বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে অনতিবিলম্বে সেশনজট নিরসন এবং শিক্ষার আধুনিকায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
৩. পর্যাপ্ত ও নিরাপদ যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. অনতিবিলম্বে চাকসু নির্বাচন দিতে হবে।
৫. দ্রুত সময়ের মধ্যে টিএসসি স্থাপন, সেন্ট্রাল অডিটোরিয়াম নির্মাণ, কেন্দ্রীয় মসজিদ পুনর্নির্মাণ এবং আবাসিক হল ও অন্যান্য স্থাপনাসমূহ সংস্কার করতে হবে।
৬. জুলাই বিপ্লব ও ফ্যাসিবাদী শাসনামলে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত শিক্ষার্থীদের স্থায়ী বহিষ্কার এবং জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করতে হবে।
৭. বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে অবৈধ নিয়োগের সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার এবং নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরিচ্যুত করতে হবে।