• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২,
  • ৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭

৫৬ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করলেন শাম্মী আক্তার


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৫, ১০:৪৬ এএম
৫৬ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করলেন শাম্মী আক্তার

বয়স ৫৬। সন্তানরা উচ্চশিক্ষিত, সংসারের দায়িত্ব শেষ প্রায়। কিন্তু এখানেই থেমে যাননি খুলনার শাম্মী আক্তার। নিজের অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণের জেদে আবারও হাতে নিয়েছেন কলম। আর সেই জেদের ফলেই বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.১৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।

খুলনার মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজের শিক্ষার্থী শাম্মী আক্তার প্রমাণ করেছেন—শিক্ষার কোনো বয়স নেই, আর ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব।

১৯৮৮ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন শাম্মী। সংসার, সন্তান, দায়িত্ব—সব মিলিয়ে থেমে যায় নিজের পড়াশোনা। তবে হৃদয়ের ভেতরটা জুড়ে ছিল একটাই আক্ষেপ—“যদি আবার পড়তে পারতাম!”

২০১৯ সালে ছেলে ও স্বামীর অনুপ্রেরণায় ফের শুরু হয় তার শিক্ষাযাত্রা। প্রথমে খুলনার ইকবাল নগর বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি, কিন্তু পরে কোর্স বন্ধ হয়ে গেলে ভেঙে পড়েন। পরবর্তী বছর এক শিক্ষকের বার্তায় আবারও আশার আলো দেখেন।

২০২৩ সালে এসএসসি পাসের পর এ বছর সফলভাবে এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়েছেন শাম্মী আক্তার।

দিনের বেলায় সংসার, রান্না, ব্যবসা—সব কিছুই সামলাতে হয় তাকে। তাই পড়াশোনার সময় শুধু রাত।
তিনি বলেন, “সবাই ঘুমিয়ে গেলে আমি পড়তে বসতাম। অনেক রাত ২–৩টা পর্যন্ত পড়েছি। কোনো প্রাইভেট শিক্ষক ছিল না। ইংরেজি শেখার জন্য ইউটিউবে ভিডিও দেখতাম। বয়স কখনো বাধা মনে হয়নি।”

স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট হাফিজুর রহমান মোল্লা জানান, “ছেলেরা যখন পড়াশোনায় প্রতিষ্ঠিত হলো, তখন স্ত্রীকে বললাম—এখন তোমার সময়। ফল ভালো না হলেও কোনো সমস্যা নেই, পাস করলেই হবে।”

বড় ছেলে মো. মামুনুর রশীদ, খুলনার আযম খান সরকারি কমার্স কলেজের প্রভাষক, মায়ের সাফল্যে আবেগাপ্লুত— “আমি পৃথিবীর অল্প কয়েকজন সন্তানের একজন, যে তার মায়ের ফলাফলে সবচেয়ে বেশি আনন্দিত। ২০১৯ সালে আমরা সবাই মিলে এই স্বপ্ন দেখেছিলাম।”

ছোট ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষে বর্তমানে হাঙ্গেরিতে পিএইচডি করছেন।

শাম্মী আক্তারের চোখে এখন নতুন স্বপ্ন—অনার্সে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া।

“বয়স আমার কাছে কেবল একটা সংখ্যা। আমি এখনো অনেক দূর যেতে চাই। সমাজের জন্য কিছু করতে চাই,”—বললেন দৃঢ় কণ্ঠে এই অনুপ্রেরণাদায়ী নারী।

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর

Link copied!