• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

‘হঠাৎ দেওই নাইম্মা মোগো সর্বনাশ করছে’


বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৩, ০৫:৩৯ পিএম
‘হঠাৎ দেওই নাইম্মা মোগো সর্বনাশ করছে’

“কাইলগো বিয়ালে যেই রহম কলসের কান্দায় দেওই বরছে এই রহম আবারো দেওই নামলে তয় মোগো খ্যাতের তরমুজ সব পইচ্যা যাইবে। এই তিনডা মাস দিনেরে দিন, রাইতেরে রাইত কইনাই খালি ক্ষেতের পিছে খাটছি। আর কয়ডা দিন গ্যালে তরমুজ কাইট্টা আডে উডাইতে পারতাম। হঠাৎ দেওইডা নাইম্মা মোগো সাড়ে সর্বনাশ করছে। এই ক্ষতি ক্যামনে কাডাইয়া উডমু মোরা।” ভারী বর্ষণে ক্ষেতে পানি জমার পর বরগুনা সদরের বালিয়াতলী এলাকার তরমুজচাষি ফজলুল হক এভাবে হতাশা ব্যক্ত করেন।

বুধবার (২২ মার্চ) দুপুরে বরগুনা সদরের হেউলীবুনিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় টানা ভারী বর্ষণে বরগুনায় তরমুজচাষিদের ক্ষেতে পানি জমেছে। এতে পচন ধরার পাশাপাশি তরমুজ পরিপক্ব হওয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর বরগুনায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের আশা করেছিল হেক্টরপ্রতি ৪০ টন তরমুজের ফলন হবে। কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা অনুসারে বরগুনায় তরমুজের ফলনও আশানুরূপ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

বরগুনার সদর উপজেলার বালিয়াতলী, বুড়িরচর, নলটোনা ও সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি তরমুজের আবাদ হয়েছে। এছাড়া আমতলী উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় তরমুজের আবাদ হয়েছে। ভারী বর্ষণের ফলে ওই সব এলাকার তরমুজ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে বরগুনাসহ উপকূলে টানা তিন ঘণ্টা ভারী বর্ষণ হয়। এতে জেলার সব তরমুজ ক্ষেতেই পানি জমে যায়। সন্ধ্যার পর বৃষ্টি কমলে আটঘাট বেঁধে ক্ষেতে নামেন চাষি। সেচ পাম্প দিয়ে রাতভর প্রচেষ্টায় ক্ষেতের জলাবদ্ধতা কমানোর চেষ্টা চালান।

তরমুজচাষি রেজাউল করিম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “প্রায় ১৬০ শতাংশ জমিতে তরমুজ লাগাইছি। দেওইতে সব খ্যাতই তলাইয়া গ্যাছে। কেবল তরমুজটা পোক্ত অইয়া ওডা শুরু হরছেলে। বেডের মাডি ভিজা, এই তরমুজে পচন ধইরা নষ্ট অইয়া যাইবে।”

রেজাউল জানান, ভারী বর্ষণের কারণে ইতোমধ্যেই ক্ষেতের ২৫ ভাগ তরমুজ নষ্ট হয়েছে। আর দু-এক দিন বৃষ্টি থাকলে দুই-তৃতীয়াংশ তরমুজ নষ্ট হয়ে যাবে। এই এলাকার অন্য চাষিদের ক্ষেতেরও একই অবস্থা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরগুনা জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ভারী বর্ষণে বরগুনার প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির তরমুজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে প্রায় শতকোটি টাকার তরমুজ নষ্ট হতে পারে। তবে বৃষ্টি না নামলে বেশিরভাগ তরমুজ রক্ষা করা সম্ভব হবে। আমরা কৃষকদের সেচে সহযোগিতাসহ এ অবস্থায় কি করণীয় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি।”

Link copied!