• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
লকআপে রহস্যজনক মৃত্যু

পুলিশ বলছে আত্মহত্যা, পরিবারের দাবি পিটিয়ে হত্যা


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২১, ০৫:২৬ পিএম
পুলিশ বলছে আত্মহত্যা, পরিবারের দাবি পিটিয়ে হত্যা

সাতক্ষীরায় গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বাবলু সরদারের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা জুড়ন সরদারের ছেলে বাবলু সরদারকে গোয়েন্দা পুলিশের লোকজন পিটিয়ে হত্যা করেছে। তবে পুলিশের দাবি, বাবুল সরদার (৫৬) গোয়েন্দা পুলিশের লকআপের মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন। তার বিরুদ্ধে আরও ৪টি মাদক মামলা রয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন আলম চৌধুরী জানান, বাবুল সরদার  নামের ওই ব্যক্তিকে শনিবার সকালে তার গ্রামের বাড়ি দেবহাটা উপজেলার বসন্তপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ৫০ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়।

ইয়াসিন আলম চৌধুরী বলেন, “গ্রেপ্তার হওয়া বাবুল সরদারকে গোয়েন্দা পুলিশের লকআপে রেখে দেওয়া হয়। আজ (রোববার) তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। শনিবার দিবাগত রাতের কোনো একসময় তিনি গলায় নিজের কোমরে ব্যবহৃত নাইলনের মোটা সুতা দিয়ে লকআপের গেটের গ্রিলের সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়।”

বাবুল সরদারের মেয়ে সুলতানা মুন্নি বলেন, “শনিবার সকালে বোরকা পরা এক নারী আকস্মিকভাবে তাদের বাড়িতে ঢুকে তার বাবার ঘরে গিয়ে ফেনসিডিল রেখে কাছে থাকা গোয়েন্দা পুলিশকে ইশারা করেন। সঙ্গে সঙ্গে তার বাবাকে ওই ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এসময় ঘরে তল্লাশি চালিয়ে ৩৫ হাজার টাকাও নিয়ে যায় তারা।”

মুন্নি আরো বলেন, “আমার বাবা কোমরে কখনো সুতালি(রশি) ব্যবহার করতেন না। তাহলে তিনি কিভাবে লকআপের মধ্যে আত্মহত্যা করলেন?”

প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, “গেটের গ্রিলের সঙ্গে নিজেকে সুতালিতে ঝুলিয়ে কি কখনো আত্মহত্যা করা সম্ভব? পুলিশ তাকে হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চাই।”

এদিকে বাবুল সরদারের ছেলে আলমগীর হোসেন জানান, তার বাবাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়। এসময় বাড়িতে থাকা ৩৫ হাজার টাকাও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা নিয়ে যায়।

আলমগীর হোসেন বলেন, “পুলিশ আমার বাবাকে মারধর করেছে এবং এক পর্যায়ে তিনি মারা গেছেন। এখন পুলিশ বলছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।”

আলমগীর হোসেন আরও বলেন, “পুলিশ আমাদের বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছে, আপনাদের লোক আত্মহত্যা করেছে। লাশ নিয়ে যান।”

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি নিজের কোমরে থাকা নাইলনের সুতা পেঁচিয়ে লকআপের গেটের গ্রিলে ঝুলে রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে যেকোনো একসময় আত্মহত্যা করেছেন। পরে ম্যাজিস্ট্রেট আকতার হোসেন ও মেডিকেল অফিসার ডা. জয়ন্ত কুমারের উপস্থিতিতে লাশ নামিয়ে ময়নাতদন্ত করার জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সুপার আরো জানান, এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির কারনে পুলিশের এএসআই সোহেল শেখ ও কনস্টেবল শরিফুলসহ দুই সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

Link copied!