বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়েকে নিয়ে কটুক্তির অভিযোগে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে অবশেষে নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত মামলা গ্রহণ করেছে।
একই সঙ্গে তার ও ভার্চুয়াল টকশো উপস্থাপক মহিউদ্দিন নাহিদ হেলালের বিরুদ্ধে করা মানহানির মামলার আবেদন গ্রহণ করে তদন্তের জন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) নির্দেশ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ইমরান মোল্লা।
রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান।
পুলিশের পরিদর্শক জানান, গত ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক হাকিম শামসুর রহমানের আদালতে মামলার আবেদন করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম ওমর ফারুক নয়ন। সেটি আমলে নিয়ে রোববার বিকেলে ডিবিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মামলার বিষয়ে বাদী বলেন, “মুরাদ হাসান সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য জাইমা রহমানের নামে কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন মন্তব্য করেছেন। জাইমা রহমান সম্ভ্রান্ত পরিবারের একজন সদস্য। তাকে নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও অশালীন মন্তব্য করা হয়েছে, জিয়া পরিবারের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। এজন্য মুরাদ হাসানসহ উপস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদকে আসামি করে মামলা করেছি।”
এর আগে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার আদালতে একই অভিযোগে মুরাদ ও নাহিদের নামে মামলার আবেদন হয়। এর কোনোটি হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা, কোনোটি মানহানির মামলা। বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা এই আবেদনগুলো করেন। তবে সবকটি আবেদনই খারিজ হয়ে যায়।
গত ১ ডিসেম্বর এক ফেসবুক লাইভে মুরাদ হাসান খালেদা জিয়ার নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেন। বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। এরপর চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে তার অশোভন কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হলে শুরু হয় নতুন বিতর্ক।
এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মুরাদকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। গত ৭ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন মুরাদ।
এরপর তিনি কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। তবে কোভিড প্রটোকল না মানায় তাকে দেশটিতে ঢুকতে দেয়া হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় ফেরেন তিনি। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সেদিন সংবাদকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে যান মুরাদ।
এরপর তার আর সন্ধান মেলেনি। গুঞ্জন রটে, রাজধানীর উত্তরার একটি ভবনে ওঠেন তিনি। তবে তার অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। এর ৪০ দিন পর গত ২২ জানুয়ারি তাকে নিজ সংসদীয় এলাকা জামালপুরে চাচার জানাজায় অংশ নিতে দেখা যায়।
এরই মধ্যে নতুন বিতর্কে জড়ান সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।
গত ৬ জানুয়ারি জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান মুরাদের স্ত্রী জাহানারা এহসান। পরে ধানমন্ডি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই মুরাদ বাসা থেকে বেরিয়ে যান। ওইদিন বিকেলে স্বামীর বিরুদ্ধে জিডি করেন জাহানারা।
জিডিতে মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে মারধর, মানসিক নির্যাত ও হত্যার হুমকির অভিযোগ আনেন। নিরাপত্তাহীনতায় পড়ার কথা জানালে পুলিশ তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার কথা জানায়। সেই জিডি তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।