• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ জুন, ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

গোরখোদক মনু মিয়ার সঙ্গী সেই ঘোড়াটি মেরে ফেলল দুর্বৃত্তরা


কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২৫, ০৪:২৮ পিএম
গোরখোদক মনু মিয়ার সঙ্গী সেই ঘোড়াটি মেরে ফেলল দুর্বৃত্তরা

কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মনু মিয়া। মুসলান কারও মৃত্যুর খবর শুনলেই খুন্তি, কোদালসহ প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘোড়ায় করে ছুটে যান সেখানে। বিনা স্বার্থে কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই খুড়ে দেন কবর। 

৫০ বছর ধরে মানুষের অন্তিম যাত্রায় এভাবেই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। মনু মিয়ার ডায়েরির তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত তিনি কবর খুঁড়েছেন ৩ হাজার ৫৭টি।

মনু মিয়ার বয়স এখন ৬৭ বছর। জীবনভর কবর খোঁড়ার কাজ করতে গিয়ে নিজের দিকেই খেয়াল দেওয়া হয়নি তার। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা জটিল রোগ। রোগে কাবু হয়ে সম্প্রতি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি। ১৪ মে তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই একরকম মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা চলছে নিঃসন্তান মানুষটির। স্ত্রী রহিমা বেগম স্বামীর পাশে আছেন ছায়া হয়ে।

কবর খুঁড়তে দূরের যাত্রায় দ্রুত পৌঁছাতে নিজের ধানি জমি বিক্রি করে কয়েক বছর আগে একটি ঘোড়া কিনেছিলেন মনু মিয়া। ঘোড়াটি সচল রেখেছিল তাকে। বাড়িতে মনু মিয়া ও তার স্ত্রী রহিমা বেগমের অনুপস্থিতিতে অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে ঘোড়াটি। শুক্রবার (১৬ মে) সকালে পাশের মিঠামইন উপজেলার হাশিমপুর ছত্রিশ গ্রামের একটি মাদ্রাসার পাশে পানির মধ্যে ঘোড়াটির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। ঘোড়াটির বুকে ধারালো অস্ত্রের আঘাত। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মনু মিয়ার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা ভেবে স্ত্রী ও স্বজনেরা তার কাছে গোপন রেখেছেন ঘোড়াটি হত্যার কথা।

মনু মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, “উনার (মনু মিয়ার) অবস্থা ভালো না। উনি জীবনে কারও কোনো ক্ষতি করেননি। এত দিন জানতাম উনাকে মানুষ ভালোবাসে। উনার এমন খারাপ অবস্থায় কী করে এমনভাবে উনার প্রিয় ঘোড়াটিকে মানুষ মেরে ফেলতে পারল। খবরটা আমরা উনাকে দিলে উনি কোনোভাবেই সহ্য করতে পারবেন না।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একজন সুদক্ষ গোরখোদক হিসেবে মনু মিয়ার সুনাম রয়েছে দুর্গম হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, শাল্লা, আজমিরীগঞ্জসহ পাশের এলাকায়। এ ছাড়া রাজধানীর বনানী কবরস্থানসহ দেশের নানা প্রান্তে তার সুনাম রয়েছে। শুধু কবর খনন করেই ক্ষান্ত হন না মনু মিয়া। এ পর্যন্ত যাদের কবর খুঁড়েছেন তিনি, তাঁদের মৃত্যুর দিন–তারিখ সব লিখে রাখেন নিজের ডায়েরিতে। মনু মিয়ার সংকটকালে এভাবে তার প্রিয় ঘোড়াটিকে মেরে ফেলা হবে, সেটি কেউ ভাবতেও পারেননি। 

মনু মিয়ার প্রতিবেশী এস এম রিজন বলেন, “মনু মিয়া সারা জীবন নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তার অনুপস্থিতিতে তার প্রিয় ঘোড়াটিকে এভাবে দুর্বৃত্তরা মেরে ফেলল। এটা খুবই নিন্দনীয় কাজ হয়েছে। এ অপরাধের বিচার হওয়া উচিত।”

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার জানান, মিঠামইন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ামাত্রই প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Link copied!