জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছেলেকে পুলিশ থানায় নিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় স্ট্রোক করে মর্জিনা বেগম (৫৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামে উলিপুরের পান্ডুল ইউনিয়নে এক গৃহবধূর হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্তে ইলিয়াস মিয়া নামের এক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার (২৩ আগস্ট) থানায় ডাকা হয়।
মর্জিনা বেগম ওই ইউনিয়নের ইসলামপাড়া গ্রামের আহাম্মদ আলীর স্ত্রী।
ইলিয়াসের মামাতো ভাই নুর আলম বলেন, “বুধবার রাত ১০টার দিকে পান্ডুল বাজার থেকে ইলিয়াসকে পুলিশ ডেকে নিয়ে যায়। তখন আমিও তাদের সঙ্গে যাই। পরে ইলিয়াসকে আটক রেখে রাত সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ আমাকে একাই বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বাসায় তার মা মর্জিনা বেগমসহ সবাই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তার মা ছেলের জন্য কান্নাকাটি করছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে ইলিয়াসের বোন জামাই সফিকুলকে নিয়ে আমি আবার থানায় যাই। পরে আমাদের দুজনের জিম্মায় পুলিশ ইলিয়াসকে ছেড়ে দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “বেলা ১১টার দিক বাড়ি ফেরার পর মায়ের সঙ্গে দেখা হতেই মা-ছেলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পরেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন মর্জিনা বেগম। চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক জানান তিনি স্ট্রোক করেছেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।”
সারা রাত থানায় থাকা ইলিয়াস মিয়া বলেন, “আমি কোনো অপরাধ করিনি। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের নামে আমাকে হয়রানি করেছে। আমাকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু কোনো তথ্য প্রমাণ না পাওয়ায় সারা রাত থানায় আটক রেখে সকালে ছেড়ে দেয়। এসব নিয়ে আমার মা দুশ্চিন্তায় স্ট্রোক করে মারা গেলেন।”
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. ইয়ামিন বলেন, “রোগীর ব্রেন স্ট্রোক হয়েছিল। রোগীকে হাসপাতালে আনার পর আমরা সিটি স্ক্যানের পরামর্শ দেই। সিটি স্ক্যান করার কিছুক্ষণ পর রোগী মারা যান। রোগীর অতিরিক্ত রক্তচাপ ছিল। সাধারণত অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় থাকলে রোগীর এমন অবস্থা হতে পারে।”
এ ব্যাপারে উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মর্তুজা বলেন, “হত্যাকাণ্ডের শিকার রিংকি বেগমের বিয়ের ঘটকের সঙ্গে ইলিয়াসের পরিচয় ছিল। সেই সূত্র ধরে হত্যা মামলাটির তদন্তের স্বার্থে ইলিয়াস মিয়াকে থানায় ডাকা হয়। রাতে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে যেতে দেওয়া হয়৷ কিন্তু রাতে বৃষ্টি হওয়ায় ইলিয়াস নিজেই অপেক্ষা করছিলেন সকাল হওয়ার। তারপর সকালে আমরা তার পরিবারের দুজন সদস্যের জিম্মায় ছেড়ে দেই।”
গত ১৩ আগস্ট কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামে বাবার বাড়ি থেকে রিংকি (১৮) নামের এক নববিবাহিত কিশোরীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।